নীলফামারীর মধ্য রামনগরে প্রাথমিক স্কুল আছে শিক্ষার্থী নেই
- আপডেট সময় : ০৭:১৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২
- / ৯৬৮৬ বার পড়া হয়েছে
নবিজুল ইসলাম নবীন:
“কাজির গরু কিতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই” শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কাগজে-কলমে ভর্তি আছে ১২১ জন শিক্ষার্থী। অথচ তারা কেউ স্কুলে আসেনি। কেন আসেনি, তা জানার জন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলতে গেলে দেখা যায় তিনিও আসেননি বিদ্যালয়ে। গতকাল সোমবার(২১ নভেম্বর) নীলফামারী সদরের রামনগর ইউনিয়নের মধ্য রামনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুপুর ১১টা ৩৮মিনিটে গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।
চারজন শিক্ষকের মধ্যে সহকারী শিক্ষক পাওয়া যায় মাত্র দুজন সহকারী শিক্ষক একে আজাদ ও শিক্ষিকা উম্মে কুলছুম। অন্য আরেকজন সহকারী শিক্ষক কামিনী কান্ত রায় স্কুলে এসে হাজিরা দিয়ে স্কুলের কাজে চলে যান শহরে।
সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সহকারী শিক্ষক একে আজাদ এর ফোন পেয়ে বিদ্যালয়ে ছুটে আসে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ললিত চন্দ্র রায়। এসেই দুপুর ১২.৫০টায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, যা ক্যামেরায় ভিডিও ধারন করা হয়। শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতায় দেখা যায়, শিশু শ্রেনিতে ২০জন, প্রথম শ্রেনিতে ২১জন, দ্বিতীয় শ্রেনিতে ২৩জন, তৃতীয় শ্রেনিতে ২৬জন, চতুর্থ শ্রেনিতে ১৭জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১৪জন মোট শিক্ষার্থী মাত্র ১২১জন। প্রতিদিনের মতো উপস্থিত ছিলো না শিক্ষার্থীরা। অথচ প্রতি শ্রেণিতে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী থাকার কথা। বিদ্যালয়টিতে শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র চারটি। দুই শিফটে ক্লাস হচ্ছে শিক্ষাথী ছাড়া।
একতলা ভবনের বিদ্যালয়টির ফটকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবিসহ নাম লেখা থাকলেও দেখতে হ. য. ব. র. ল অবস্থা। বিদ্যালয়ের সামনে একটি জাতীয় পতাকা উড়ছে, অসমাপ্ত রয়েছে শহিদ মিনারের কাজ। স্কুলটি স্থাপিত হয়েছে ১৯৮৯ সালে।
স্কুলে মোট শিক্ষক আছেন চারজন, একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্বে ও অপর তিনজন সহকারী শিক্ষক, এদের মধ্যে একজন নারী শিক্ষিকা রয়েছে, বিদ্যালয়টিতে দুটি টয়লেট রয়েছে যা শিক্ষক ও ছাত্র/ছাত্রীরা ব্যবহার করে। তবে পরিষ্কার করার লোক না থাকায় অপরিছন্নতায় রয়েছে টয়লেটের কক্ষ দুটি যা ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শ্রেনি কক্ষের ব্রেঞ্চ গুলো দেখা যায় এলোমেলো। ২০২১-২২ চলতি অর্থ বছরের খুদ্র মেরামতের এক লক্ষ ও শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ৪০ হাজার বরাদ্দ পেলেও স্লিপের কোন কাজেই তিনি করেননি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বহীনতার কারনে মানসম্মত লেখাপড়া না হওয়ায় স্কুলের পাশবর্তী শিক্ষার্থীরা পড়তে যাচ্ছে অন্যত্রে। জানা গেছে প্রায় চার বছর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন ললিত চন্দ্র রায়। শিক্ষাখাতের বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতসহ নানান অভিযোগ পাওয়া যায় ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এই বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ললিত চন্দ্র রায়ের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি পেশারের রোগী বলে জানান। নিউজ না করার জন্য সাংবাদিকদের চা-নাস্তা খাওয়ানোসহ নানান প্রলোভন দেখিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার চেস্টা করেন।
বিষয়টি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, আমিও জানি ওই
বিদ্যালয়ের অবস্থা, সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্যান্য স্কুলের চেয়ে অনেক কম। ভারপ্রাপ্ত প্রধানের অবহেলায় শিক্ষার্থী না আসার কারন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন বলে তিনি জানান।
বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নেই কেন আসেনি এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দেড়িতে স্কুলে আসাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মুঠোফোনে কথা হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, আপনারা রিপোর্ট করেন ব্যবস্থা নিবো।