প্রতিনিধি ২ মার্চ ২০২৩ , ৩:০৬:১২ প্রিন্ট সংস্করণ
ফারজানা রহমান সম্পা।
প্রত্যেক দেশের নিজস্ব প্রতীক হিসেবে পতাকা ব্যবহৃত হয়। জাতীয় পতাকা হলো জাতি হিসেবে আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয়।এ পতাকা পুরো দেশকে ধারণ করেছে তার বুকে।
পতাকা এমন একটি প্রতীক যা একটি জাতিকে অন্যের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়।বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ইতিহাসের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জড়িয়ে রয়েছে বলেই এর প্রতি আমাদের আবেগটাও অন্যরকম।
২ মার্চ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিবস।১৯৭১ সালের এই দিনে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তির বীজ বপন হয়েছিল।পতাকা উত্তোলনই জানান দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের বিকল্প নেই। দীর্ঘ ৯ মাসের বহু ত্যাগ, রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাস এই পতাকাই বিবেচিত হয় আমাদের জাতীয় পতাকা হিসেবে।এর আনুষ্ঠানিক নাম জাতীয় পতাকা দিবস অন্য নাম পতাকা উত্তোলন দিবস।আর স্বাধীনতার বড় অর্জন হলো একটি পতাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল।২ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষিত হওয়ায় সকাল থেকেই দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ ঢাকার রাজপথে অবস্থান নেয়, ঢাকা পরিণত হয় মিছিলের নগরীতে। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর জুলুম, নিগ্রহ, শোষণ আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে তৎকালীন ডাকসু নেতাদের উদ্যোগের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ জড়ো হতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। অকুতোভয় ছাত্রসমাজ ও জনতা পাকিস্তানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জানিয়ে দেয় বাঙালিরা মাথা নত করবে না।
বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত ওই পতাকা সর্বপ্রথম উত্তোলন করেছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তখন ছাত্র সমাবেশের নেতৃত্বে ছিলেন নূরে আলম সিদ্দিকী, আব্দুল কুদ্দুস মাখন, শাহজাহান সিরাজ, আ স ম আব্দুর রব প্রমুখ। এছাড়া একাত্তরের এই দিনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক জনসভার ঘোষণাও দেয়া হয় এই দিনে। লাল রঙের ভরাট বৃত্তটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার নতুন সূর্যের প্রতীক।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম নিজ হাতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন ২৩ মার্চ ১৯৭১ সালে ধানমন্ডিতে তার নিজ বাসভবনে।
প্রথমে পতাকার ডিজাইন ঠিক করা হয়েছিল সবুজ জমিনের ওপর লাল সূর্য, তার মধ্যে হলুদে খচিত বাংলাদেশের মানচিত্র। ১২ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে স্বাধীনতার পর পতাকা থেকে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে পতাকার মাপ ও রঙ নির্ধারণ করে এর পরিমার্জন করা হয়, যা আজ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।সবুজ রং বাংলাদেশের সবুজ প্রকৃতি ও তারুণ্যের প্রতীক, বৃত্তের লাল রং উদীয়মান সূর্য, স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারীদের রক্তের প্রতীক।সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে লাল বৃত্ত, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার এই রূপটি ১৯৭২ সালের ১৭ জানুয়ারি সরকারিভাবে গৃহীত হয়।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন-জাতীয় পতাকা দিবস সম্পর্কে সবার মধ্যে তেমন সচেতনতা নেই।আমি মনে করি এটা আমাদের ঐতিহ্য, ইতিহাস,আমাদের সংস্কৃতি আর এই পতাকাই হলো আমাদের বড় পরিচয়।সেই জায়গা থেকে এই দিনটি আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উদযাপন করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব হওয়া উচিত।বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পতাকার বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা প্রয়োজন।কিভাবে তৈরী হয়েছে একটি জাতির পতাকা।
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা এ দেশের প্রতিটি মানুষের গর্ব ও অহংকার।পতাকা একক- বস্ত্রবিশেষ, যা কোনো গোষ্ঠী, দল, জাতি, দেশ বা সংগঠনের এমনকি বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের প্রতীক তথা পরিচায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মিনহাজ বলেন–জাতীয় পতাকা হলো একটি দেশের স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক। প্রতিটি স্বাধীন দেশের একটি পতাকা আছে।তেমনি আমাদের লাল সবুজ পতাকা অনেক ইতিহাসের সাক্ষী।আর এই ইতিহাসের সাক্ষী সবার প্রতি সম্মান রেখে, মর্যাদা এবং শ্রদ্ধার সাথে এই দিনটি পালন করা উচিত।
মা মাতৃভূমির প্রতি শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমে যেমন মনুষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনি মাতৃভূমির সঙ্গে জাতীয় পতাকাও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকেই লাল-সবুজের পতাকার প্রতি অবিচল আনুগত্য ও শ্রদ্ধা আমাদের চেতনার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের সার্বভৌমত্বের নিদর্শন লাল-সবুজের পতাকা। এই পতাকা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় শহীদের বুকের তাজা রক্তে সিক্ত সবুজ জমিনের কথা।তাই আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিবস পালনে নাগরিক সমাজকে সচেতন হতে হবে।