নানা আয়োজনে ৬ ডিসেম্বর দুর্গাপুর মুক্ত দিবস পালিত
- আপডেট সময় : ১০:১৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৯৬৪২ বার পড়া হয়েছে
আনিসুল হক সুমন, দুর্গাপুর(নেত্রকোণা)প্রতিনিধিঃ
আজ ৬ ডিসেম্বর দুর্গাপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেদের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে পাক-হানাদার বাহিনীর কবল থেকে নেত্রকোণার সীমান্তবর্তী দুর্গাপুর উপজেলাকে মুক্ত করেছিলেন।
এ উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গন থেকে সকাল ১১টার সময় একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালী বের হয়ে পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। এরপর উপজেলা পরিষদ হলরুমে দুর্গাপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আনন্দ র্যালী ও আলোচনা সভায় রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিল,মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দপ্তর অংশগ্রহণ করে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহেদ আলী মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে জানান, পাক হানাদার বাহিনীর মেজর সুলতানের নেতৃত্বে দুর্গাপুরের বিরিশিরিতে একটি শক্তিশালী পাকসেনা ঘাঁটি গড়ে উঠেছিল। এখানে বসেই পাকসেনারা বাংলার কুখ্যাত দালাল, আলবদর, রাজাকারদের সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রন করতো দুর্গাপুর ও কলমাকান্দার সীমান্ত এলাকা গুলো। সেইসাথে বুদ্ধিজীবি ও গুনীজনদের ধরে এনে রাতের আঁধারে বিরিশিরি‘র বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হতো।
দুর্গাপুরের এই সশস্ত্র যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুধীর হাজং সহ বিজয়পুর সংলগ্ন স্থানে মুক্তিবাহিনীদের তুমুল যুদ্ধের এক পর্যায়ে জয় বাংলা ধ্বনি উচ্চারণ করে এগিয়ে আসার সময় ওঁৎ পেতে থাকা পাকসেনাদের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ বিশ্বাস । এছাড়া ৫ মে গাঁওকান্দিয়া গ্রামে ১৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে এক সাথে হত্যা করা সহ নাম অজানা অনেকেই শহীদ হয়েছেন বর্বর পাক-হানাদার দের বুলেটের নির্মম আঘাতে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক জানান,দীর্ঘ ৯ মাস এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ১৮ই নভেম্বর ১৯৭১ দৌলতপুর (লোহাচোড়া) নামক স্থানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল যুদ্ধ সংঘটিত হয় এ যুদ্ধে মুক্তি সেনাদের ত্রিমুখী হামলায় ১৩ জন পাকসেনা নিহত হয় এবং মেজর সুলতান হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এছাড়াও মিলিটারীদের গুলিতে এক জন, বেয়নেট এর আঘাতে এক জন ও ক্লান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খাবার সরবরাহ করতে যাওয়ার সময় পাকসেনাদের মর্টার এর গোলাতে একজন সহ তিন গ্রামবাসী শহীদ হয়।
তারপর থেকে প্রতিনিয়ত মুক্তিযোদ্ধাদের হামলায় টালমাটাল হয়ে পরে পাকসেনাদের ভিত। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ৬ তারিখে দুর্গাপুরের আনাচে কানাচে থাকা বিভিন্ন মিলিটারী ক্যাম্পের পাশাপাশি বিরিশিরিতে অবস্থিত এই অঞ্চলের সবথেকে শক্তিশালী ক্যাম্পে অবস্থানরত সকল পাকসেনা পরাজিত হয়ে দুর্গাপুর থেকে পালিয়ে যায়।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কমান্ডার মোঃ আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন,শুধু দিবসে নয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলের জীবনে সাজাতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ এবং লালন করা সত্যিই আনন্দের ও গর্বের। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে দুর্গাপুর মুক্ত দিবস। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।