ঢাকা ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ ::
শ্রীপুরে মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে চেয়ারম্যানের সংবাদ সম্মেলন শ্রীপুরে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সময়ে কে কত মিথ্যে বলতে পারে এই প্রতিযোগীতা ছিলো- ডা. শফিকুর রহমান শ্রীপুরে বিএনপি’র বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা রসুলপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে বারপাড়া সমাজকল্যান পরিষদের শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ শ্রীপুরে প্রতিবন্ধী শনাক্ত জরিপ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত শ্রীপুর প্রেসক্লাবের নতুন সভাপতি মুসাফির নজরুল ও সাধারণ সম্পাদক নাসিরুল ইসলাম অর্থের অভাবে জীবন যুদ্ধে জয়ী সালমা খাতুন কি এবার পরাজয় বরণ করবে? কুমিল্লায় জাকের পার্টির ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রতিনিধি সম্মেলন কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজে ৬৭ তম জোটা ২৮ তম জোটি অনুষ্ঠিত

মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ, এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জীবিতরা

নিলফামারী প্রতিনিধি।
  • আপডেট সময় : ০৯:২৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪
  • / ৯৬৫৪ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুর্নারঝাড় গ্রামের বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম। পাঁচ বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। ছয় মাস আগে হঠাৎ করেই তার ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কয়েকবার ধরনা দিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন।

তার নামের বরাদ্দ করা বয়স্ক ভাতা বাতিল করা হয়েছে। তাকে কীভাবে মৃত দেখানো হলো, কারা এমনটি করল, এর কিছুই জানেন না তিনি।শুধু হামিদুল ইসলাম নয়, তার মতো উপজেলার অনেক জীবিত ভাতাভোগী এখন কাগজে-কলমে মৃত বলে জানা গেছে। তারা বেঁচে থেকেও ভাতা পাচ্ছেন না।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের মৃত দেখিয়ে কার্ড বাতিল করেছে সমাজসেবা কার্যালয়। আবার অনেক ভাতাভোগীর ফোন নম্বর গোপনে পরিবর্তন করে ভাতাবঞ্চিত করা হয়েছে। ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।

এসব বিষয়ে অভিযোগ জানালে হয়রানি ও অসদাচরণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।তাদের দাবি, মাসে ৬০০ টাকা ভাতা একজন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত না হলেও এটি নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান। তাই এ সম্মান ফিরে পেতে চান তারা।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিমলায় ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ২৩০। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৮৫ জন বয়স্ক, ৬ হাজার ৪৭ জন প্রতিবন্ধী এবং ৭ হাজার ৮৯৮ জন বিধবা ভাতাধারী।ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া হামিদুল ইসলাম বাংলাদেশের বার্তা’কে বলেন, পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেয়েছি। ৬-৭ মাস আগে হঠাৎ ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভাতার টাকা তুলতে স্ত্রীসহ একাধিকবার সমাজসেবা কার্যালয়ে ধরনা দিয়েছি। একপর্যায়ে জানানো হয়, ভাতা ভোগীদের তালিকায় আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে।

তাই ভাতা কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। সংসার চালাতে বৃদ্ধ বয়সেও দিনমজুরের কাজ করি। সরকারের দেওয়া এই টাকাটা একটা সম্বল হয়ে উঠেছিল। এদিকে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে দিনের পর দিন সমাজসেবা অফিসে যাতায়াত করতে বেশ টাকাও খরচ হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছে সুদের ওপর দেড় হাজার টাকা নিয়েছি। এখন সেই টাকাও বেড়ে সুদে-আসলে দ্বিগুণ হয়েছে। এখন টাকা পরিশোধের চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে।

খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের আজিরন বেওয়া সাত বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। তবে গত ৯ মাস ধরে আর ভাতা পাচ্ছেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য ওহাব আলীর মাধ্যমে সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন কাগজ-কলমে তিনি মৃত, তাই ভাতা বন্ধ। কে এমন কাজ করেছে, তা জানেন না ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান কেউই। এ নিয়ে রীতিমতো হতবাক বয়সের ভারে নুয়ে পড়া আজিরন বেওয়া। তেমন কিছু ভালো করে বলতেও পারেন না। কথাও বোঝেন কম। একমাত্র ছেলে ও স্বামীর মৃত্যুর পর বয়স্ক ভাতার টাকা ও স্বজনদের সহযোগিতায় চলছিল তার জীবন। এখন ভাতা বন্ধ হওয়ায় নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।আজিরন বলেন, ইউপি সদস্য ওহাব আলীর মাধ্যমে জানতে পারি ভাতাভোগীদের তালিকায় আমাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বাতিল করা হয়েছে। এরপর সমাজসেবা অফিসে গিয়েছি। তারা কাগজপত্র দেখেছে। মৃত তালিকা থেকে নাম কাটতে খরচ বাবদ কিছু টাকা চেয়েছে। আমি দিতে পারিনি।

ইউপি সদস্য ওহাব আলী বলেন, আজিরন বেওয়ার বয়স প্রায় ৭৫ ছুঁই ছুঁই। তিনি খুবই অসহায়। তাকে সব সময়ই কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সমাজসেবা কার্যালয়ের লোকজন মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার গ্রামে কোনো লোক মারা গেলে অবশ্যই আমার জানার কথা। বিষয়টি হাস্যকর। এই ইউনিয়নে আরও ২০ থেকে ২৫ জন সুবিধাভোগীর একই সমস্যা হয়েছে।

ছয় মাস ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা পান না কুমার পাড়া গ্রামের রিতা রায়। তার দাদি নিরোদীনি রায় বলেন, নাতনির ভাতার টাকা কোথায় যাচ্ছে, কেন পাচ্ছি না তা জানতে সমাজসেবা অফিসে তিন মাস থেকে ঘুরছি। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে ভাতার খোঁজ নিতে গিয়ে চরমভাবে অপদস্থ হয়েছি। ওই কর্মকর্তা দুর্ব্যবহার করে বলেছেন, ভাতা পাবেন না। সরকার টাকা না দিলে আমি কোথায় থেকে টাকা দেব?

একই অভিযোগ করে উত্তর তিতপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন, আগে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেলেও দেড় বছর ধরে টাকা পাইনি। দেড় বছর ধরে সমাজসেবা কার্যালয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু সুবিধাভোগীরা নন, সেবা নিতে আসা অন্যরাও হয়রানির শিকার হন এই কার্যালয়ে।উপজেলার রুপাহারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হাজরা বেগম বলেন, ওই অফিসের স্যারের (সমাজসেবা কর্মকর্তা) দুর্ব্যবহারে আমরা অতিষ্ঠ। তিনি ধমক দিয়ে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। অফিস কক্ষে ঢুকতে দেন না, শুধু ঘুরান। এমন অফিসার থাকলে গরিব-অসহায় মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে ভুক্তভোগীরা।

উপজেলার খালিসা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান সরকার জানান, তার ইউনিয়নের হামিদুল ও আজিরন বেওয়া জীবিত আছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের কখনো মৃত ঘোষণা করা হয়নি। তাদের নামে মৃত্যু বা অন্য কোনো সনদ কোথাও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

মৃত্যুসনদ ছাড়া ভাতা বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার নুরী বলেন, ভাতাভোগীদের সঠিক (লাইভ ভেরিফিকেশন) যাচাই-বাছাইয়ের সময় যাদের পাওয়া যায়নি; নিরুদ্দেশ দেখিয়ে তাদের ভাতা কার্ড বাতিল করা হয়। নতুন সুবিধাভোগীর নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ সংখ্যা ৫-৭ জনের বেশি নয়।

নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের প্রত্যয়নপত্র বা মৃত্যুসনদ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের তালিকা দিয়েছেন। তবে তালিকার কপি দেখাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এ সময় সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার বিষয়টিও অস্বীকার করেন।

এসব বিষয়ে কথা হয় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, মৃত্যুসনদ ছাড়া ভাতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। এ ঘটনায় তদন্ত করে কোনো অনিয়ম পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ, এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন জীবিতরা

আপডেট সময় : ০৯:২৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ জুন ২০২৪

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুর্নারঝাড় গ্রামের বাসিন্দা হামিদুল ইসলাম। পাঁচ বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। ছয় মাস আগে হঠাৎ করেই তার ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কয়েকবার ধরনা দিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন।

তার নামের বরাদ্দ করা বয়স্ক ভাতা বাতিল করা হয়েছে। তাকে কীভাবে মৃত দেখানো হলো, কারা এমনটি করল, এর কিছুই জানেন না তিনি।শুধু হামিদুল ইসলাম নয়, তার মতো উপজেলার অনেক জীবিত ভাতাভোগী এখন কাগজে-কলমে মৃত বলে জানা গেছে। তারা বেঁচে থেকেও ভাতা পাচ্ছেন না।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাদের মৃত দেখিয়ে কার্ড বাতিল করেছে সমাজসেবা কার্যালয়। আবার অনেক ভাতাভোগীর ফোন নম্বর গোপনে পরিবর্তন করে ভাতাবঞ্চিত করা হয়েছে। ভাতার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা পাচ্ছেন না তারা।

এসব বিষয়ে অভিযোগ জানালে হয়রানি ও অসদাচরণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।তাদের দাবি, মাসে ৬০০ টাকা ভাতা একজন মানুষের জন্য পর্যাপ্ত না হলেও এটি নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান। তাই এ সম্মান ফিরে পেতে চান তারা।

উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিমলায় ভাতাভোগীর সংখ্যা ২৬ হাজার ২৩০। এর মধ্যে ১২ হাজার ১৮৫ জন বয়স্ক, ৬ হাজার ৪৭ জন প্রতিবন্ধী এবং ৭ হাজার ৮৯৮ জন বিধবা ভাতাধারী।ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়া হামিদুল ইসলাম বাংলাদেশের বার্তা’কে বলেন, পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেয়েছি। ৬-৭ মাস আগে হঠাৎ ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। পরে ভাতার টাকা তুলতে স্ত্রীসহ একাধিকবার সমাজসেবা কার্যালয়ে ধরনা দিয়েছি। একপর্যায়ে জানানো হয়, ভাতা ভোগীদের তালিকায় আমাকে মৃত দেখানো হয়েছে।

তাই ভাতা কার্ড বাতিল হয়ে গেছে। সংসার চালাতে বৃদ্ধ বয়সেও দিনমজুরের কাজ করি। সরকারের দেওয়া এই টাকাটা একটা সম্বল হয়ে উঠেছিল। এদিকে নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে দিনের পর দিন সমাজসেবা অফিসে যাতায়াত করতে বেশ টাকাও খরচ হয়েছে। এ জন্য স্থানীয় এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছে সুদের ওপর দেড় হাজার টাকা নিয়েছি। এখন সেই টাকাও বেড়ে সুদে-আসলে দ্বিগুণ হয়েছে। এখন টাকা পরিশোধের চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটছে।

খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের আজিরন বেওয়া সাত বছর ধরে বয়স্ক ভাতা পাচ্ছিলেন। তবে গত ৯ মাস ধরে আর ভাতা পাচ্ছেন না। স্থানীয় ইউপি সদস্য ওহাব আলীর মাধ্যমে সমাজসেবা কার্যালয়ে গিয়ে জানতে পারেন কাগজ-কলমে তিনি মৃত, তাই ভাতা বন্ধ। কে এমন কাজ করেছে, তা জানেন না ইউপি সদস্য, চেয়ারম্যান কেউই। এ নিয়ে রীতিমতো হতবাক বয়সের ভারে নুয়ে পড়া আজিরন বেওয়া। তেমন কিছু ভালো করে বলতেও পারেন না। কথাও বোঝেন কম। একমাত্র ছেলে ও স্বামীর মৃত্যুর পর বয়স্ক ভাতার টাকা ও স্বজনদের সহযোগিতায় চলছিল তার জীবন। এখন ভাতা বন্ধ হওয়ায় নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।আজিরন বলেন, ইউপি সদস্য ওহাব আলীর মাধ্যমে জানতে পারি ভাতাভোগীদের তালিকায় আমাকে মৃত দেখিয়ে ভাতা বাতিল করা হয়েছে। এরপর সমাজসেবা অফিসে গিয়েছি। তারা কাগজপত্র দেখেছে। মৃত তালিকা থেকে নাম কাটতে খরচ বাবদ কিছু টাকা চেয়েছে। আমি দিতে পারিনি।

ইউপি সদস্য ওহাব আলী বলেন, আজিরন বেওয়ার বয়স প্রায় ৭৫ ছুঁই ছুঁই। তিনি খুবই অসহায়। তাকে সব সময়ই কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু সমাজসেবা কার্যালয়ের লোকজন মৃত দেখিয়ে ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে। আমার গ্রামে কোনো লোক মারা গেলে অবশ্যই আমার জানার কথা। বিষয়টি হাস্যকর। এই ইউনিয়নে আরও ২০ থেকে ২৫ জন সুবিধাভোগীর একই সমস্যা হয়েছে।

ছয় মাস ধরে প্রতিবন্ধী ভাতা পান না কুমার পাড়া গ্রামের রিতা রায়। তার দাদি নিরোদীনি রায় বলেন, নাতনির ভাতার টাকা কোথায় যাচ্ছে, কেন পাচ্ছি না তা জানতে সমাজসেবা অফিসে তিন মাস থেকে ঘুরছি। কিন্তু সমাজসেবা কর্মকর্তার কাছে ভাতার খোঁজ নিতে গিয়ে চরমভাবে অপদস্থ হয়েছি। ওই কর্মকর্তা দুর্ব্যবহার করে বলেছেন, ভাতা পাবেন না। সরকার টাকা না দিলে আমি কোথায় থেকে টাকা দেব?

একই অভিযোগ করে উত্তর তিতপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন বলেন, আগে নিয়মিত বয়স্ক ভাতা পেলেও দেড় বছর ধরে টাকা পাইনি। দেড় বছর ধরে সমাজসেবা কার্যালয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু সুবিধাভোগীরা নন, সেবা নিতে আসা অন্যরাও হয়রানির শিকার হন এই কার্যালয়ে।উপজেলার রুপাহারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হাজরা বেগম বলেন, ওই অফিসের স্যারের (সমাজসেবা কর্মকর্তা) দুর্ব্যবহারে আমরা অতিষ্ঠ। তিনি ধমক দিয়ে তাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। অফিস কক্ষে ঢুকতে দেন না, শুধু ঘুরান। এমন অফিসার থাকলে গরিব-অসহায় মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হবে ভুক্তভোগীরা।

উপজেলার খালিসা চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুজ্জামান সরকার জানান, তার ইউনিয়নের হামিদুল ও আজিরন বেওয়া জীবিত আছেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাদের কখনো মৃত ঘোষণা করা হয়নি। তাদের নামে মৃত্যু বা অন্য কোনো সনদ কোথাও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।

মৃত্যুসনদ ছাড়া ভাতা বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুন্নাহার নুরী বলেন, ভাতাভোগীদের সঠিক (লাইভ ভেরিফিকেশন) যাচাই-বাছাইয়ের সময় যাদের পাওয়া যায়নি; নিরুদ্দেশ দেখিয়ে তাদের ভাতা কার্ড বাতিল করা হয়। নতুন সুবিধাভোগীর নাম প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ সংখ্যা ৫-৭ জনের বেশি নয়।

নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের প্রত্যয়নপত্র বা মৃত্যুসনদ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের তালিকা দিয়েছেন। তবে তালিকার কপি দেখাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এ সময় সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার বিষয়টিও অস্বীকার করেন।

এসব বিষয়ে কথা হয় জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, মৃত্যুসনদ ছাড়া ভাতা বাতিলের কোনো সুযোগ নেই। এ ঘটনায় তদন্ত করে কোনো অনিয়ম পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।