সংসদে বিরোধী দল কে হবে, জাতীয় পার্টি নাকি স্বতন্ত্র?
- আপডেট সময় : ০৪:০১:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৯৬৪৮ বার পড়া হয়েছে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ২২২টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে সরকারে না হয় আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল কে হবে? জাতীয় পার্টি (জাপা), নাকি স্বতন্ত্র ?
এবারের নির্বাচনে দলীয়ভাবে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু এই সবচেয়ে বেশি আসনের সংখ্যা মাত্র ১১। এ কয়টি আসনের বিপরীতে এবারেই প্রথম বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তারা পেয়েছেন ৬২টি আসন। এছাড়া আওয়ামী লীগের শরিক দল হিসেবে রাশেদ খান মেনন এবং রেজাউল করিম তানসেন একটি করে আসন পেয়েছেন। এর বাইরে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি আসন।
আওয়ামী লীগের বিপরীতে এবারের সংসদ নির্বাচনে আসনের ভিত্তিতে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন স্বতন্ত্ররা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কোনো দল না থাকায়, বিরোধী দল হিসেবে তাদের আবির্ভাব নিয়ে চলছে নানা রকমের কানাঘুষা।এদিকে জাতীয় পার্টির নাটক চলছেই। মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার (১০ জানুয়ারি) তারা শপথ নিতে যাবেন না। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দলটি তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে জানায়, তারা বুধবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে থাকবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় পার্টি নিজেই জানে না কী করবে বা কী করা উচিত। একেক সময়ে একেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তারা। দলটির দোদুল্যমান আচরণের কারণে আগের একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ২৩ আসন পেলেও এবার তা অর্ধেকের বেশি কমে গেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিরোধী দল নিয়ে অনেকেই জাতীয় পার্টির থেকে বেশি ভরসা করছেন স্বতন্ত্রদের ওপরে। এদের মধ্যে খোদ জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ নিজের ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘আমি চাই এইবার স্বতন্ত্র থেকে যুবক, স্মার্ট ও শিক্ষিত কেউ একজন অপজিশন লিডার হোক।’
এদিকে ৬২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হলেও এদের মধ্যে ৫৮ জনই সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মূলত নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্রের পথে হেঁটেছেন তারা। তবে নির্বাচনে জয়ী হয়েও বিরোধী দল গঠনে এরা নির্ভর করছেন আওয়ামী লীগ সরকারের ওপরে।
মঙ্গলবার (৯ জানুয়ারি) দুপুরে ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলিতে নিজের বাস ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ) বলেন, ‘যেহেতু জাতীয় পার্টি মাত্র ১১টি সিট পেয়েছে, আর স্বতন্ত্র পেয়েছে ৬২টি। এক্ষেত্রে যদি নেত্রী মনে করেন, আমাদের বিরোধী দল গঠন করা উচিত, তাহলে করবো।’আজাদ জানান, এরমধ্যেই বিদেশ থেকে ফোন এসেছে যে আপনাকে নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে, আপনি কি বিরোধী দলের নেতা হতে রাজি আছেন? আমি বলেছি, সবকিছু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আলোচনার বাইরে গিয়ে আমরা কিছু করতে পারবো না।
আজাদ যদিও নির্ভর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপরে, তবে নির্বাচনের পর গণভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিরোধী দল সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাকে বলুন আপনি কী চান? আমি বিরোধী দল গঠন করব? আমি কি সেটা করতে পারি?’
প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও সরকারি দলের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যতটা জাতীয় পার্টির দিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তার থেকে বেশি ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বতন্ত্রের দিকে।
তবে আওয়ামী লীগ কী স্বতন্ত্রদের নিয়ে একই ঘরানার আরেকটি বিরোধী দল গঠন করতে যাচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘যারা স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছেন, তারা আওয়ামী লীগ হিসেবে নির্বাচিত হননি, তাদের প্রতীকও ছিল ভিন্ন। নৌকা মার্কায় কেবল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়েছেন। কাজেই স্বতন্ত্ররা আওয়ামী লীগের এটা মুখের কথা হতে পারে, কিন্তু আইনের কথা বা বাস্তবতার কথা সেটা না। তারা যদি স্বতন্ত্র হয়ে জয়ী হতে পারেন, তাদের সে স্বাধীনতা আছে, তারা যদি মনে করেন একটা মোর্চা করেন, তখন বিরোধী দল কারা হবেন, তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
তবে আসলে বিরোধী দলের আসনে কারা জায়গা পাচ্ছেন, সেটা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছুদিন। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের মতামত জানতে সময় সংবাদের পক্ষ থেকে চালানো এক জরিপে দেখা যায়, অংশ নেয়া মানুষদের ৫৪ শতাংশই স্বতন্ত্রদের মোর্চাকে বিরোধী দল হিসেবে চায়। আর ২৪ শতাংশ মানুষ চায় জাতীয় পার্টিকে। জরিপে ২২ শতাংশ মানুষ এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি।