ঢাকা ০৯:০০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ ::

এক্সকিউজ মি

বাংলাদেশের বার্তা
  • আপডেট সময় : ০৫:১৮:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩
  • / ৯৬২১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নাহিদুল ইসলাম

মোটরযানের ধোঁয়া উড়িয়ে সেদিন বিকেলে পৌছলাম প্রাচীন এক বৃক্ষের পদতলে, গাছটির বিস্তৃত শেকড়ে গম্ভীর হয়ে জমে আছে অনেকদিনের প্রতীক্ষারত শ্যাওলা, ঘনসবুজ।

দেখলাম, একজন মানুষ একটি সাদা পাথর, বেশ গোলগাল, নিয়ে ধরে বসে আছে চোখের সামনে। লোকটাকে উন্মাদ মনে হল আমার কাছে। ওর চুলগুলো পাটের দঁড়ির মত পাকিয়ে ঝুলছে গর্দানের উপরে। ময়লা, সমস্ত অবয়বটা জুড়ে। আমি এগিয়ে গেলাম খানিকটা, ওর চেহারাটা ভাল করে দেখব বলে।

মনে হল, পাথরটাকে সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সে। তার একাগ্র দৃষ্টির মগ্নতা ভেঙে ফেলে আমি কথা বললাম, এক্সকিউজ মি! ইংরেজি শব্দটা নিজেরই কানে বাজল।

লোকটা স্রেফ চোখের মণিদুটো, আর তার সমস্ত অস্তিত্বটুকু আগের অবস্থায় বহাল রেখে, এদিকে তাকালো। বড় প্রখর সেই দৃষ্টি! পুনরায় প্রচণ্ড তীক্ষ্ণ মণিদ্বয় ফিরে গেল পাথরে, আরও গভীরভাবে খুঁজতে লাগলো যেন কয়েক মুহুর্ত আগে ফেলে যাওয়া দৃশ্যের বিকিরণ।

আমি ঐ এলাকাটির নাম জানতে চাইছিলাম, কারণ আগে কখনো ওদিকে যাইনি আমি, কিন্ত আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি দেখছেন ওভাবে?

লোকটা সম্বিত ফিরে পেল যেন। পাথরটা লুকিয়ে নিল মুষ্টির অন্তরালে। তারপরে, খানিকটা হেয়ালি করে বলল, খুঁজতেছি, কিভাবে জন্মায়, আর মরে, আর কিভাবে ঘুরতেছে ব্যাপারটা। কিন্ত পাইতেছি না, হারায় গেছে।

এটা আবার কেমন কথা! আমি যোগ করলাম, এই পাথরের মধ্যে আপনি জন্ম, মৃত্যু আর এইটার ঘোরাঘুরি খুঁজতেছেন? লোকটা এমনভাবে কথাগুলো বলেছিল যে আমার মনে হচ্ছিল সে সত্যিই কিছু একটার জন্ম আর মৃত্যু দেখতে পাচ্ছিল। আমার খটকা লাগল, জিনিসটা কোয়েল পাখির ডিম নয় তো!

লোকটা হাসল একটু। আমি বললাম, আমারেও দেখান তো ব্যাপারটা!

সে আমাকে ইশারায় পাশে বসতে বলল। আমি বসলাম। লোকটা সেঁধিয়ে এল আমার দিকে।

তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলের মধ্যে নিয়ে আকাশের আলোর প্রতিকূলে ধরল আমার চোখের সামনে। দেখি পাথরটির সেই শ্বেত স্বচ্ছতার মধ্যে বিকটভাবে নি:শ্বাস নিতে নিতে ঘুর্ণিঝড়ের মত পাঁক খাচ্ছে আমি।

আমি ছিটকে পড়ে গেলাম। হয়তো কয়েক মুহুর্ত অবচেতন কাটল, নয়তো অনেক বছর। যখন চোখ মেলে তাকালাম, দেখি আমি বসে আছি একাকী, বৃক্ষের পদতলে বিস্তৃত ঘনসবুজ আর গম্ভীর শেকড়ে প্রতীক্ষারত শ্যাওলার ওপর।

চুলগুলো আমার পাটের দঁড়ির মত পাঁকিয়ে ঝুলছে গর্দানে। আমার হাতে রয়েছে পাথরটি। আমি সেটা আকাশের আলোর প্রতিকূলে নিয়ে ধরলাম চোখের সামনে। একেবারে সাদা, বরফের মত নিশ্চুপ! কিছুই পেলাম না সেই দৃশ্যের কানাকড়িও! আমি আরো মনোযোগ দিলাম এবং ডুবে গেলাম। কোথায় গেলাম! একটি কন্ঠস্বর কানে বাজল- এক্সকিউজ মি!

লেখকঃ নাহিদুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

এক্সকিউজ মি

আপডেট সময় : ০৫:১৮:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ মার্চ ২০২৩

নাহিদুল ইসলাম

মোটরযানের ধোঁয়া উড়িয়ে সেদিন বিকেলে পৌছলাম প্রাচীন এক বৃক্ষের পদতলে, গাছটির বিস্তৃত শেকড়ে গম্ভীর হয়ে জমে আছে অনেকদিনের প্রতীক্ষারত শ্যাওলা, ঘনসবুজ।

দেখলাম, একজন মানুষ একটি সাদা পাথর, বেশ গোলগাল, নিয়ে ধরে বসে আছে চোখের সামনে। লোকটাকে উন্মাদ মনে হল আমার কাছে। ওর চুলগুলো পাটের দঁড়ির মত পাকিয়ে ঝুলছে গর্দানের উপরে। ময়লা, সমস্ত অবয়বটা জুড়ে। আমি এগিয়ে গেলাম খানিকটা, ওর চেহারাটা ভাল করে দেখব বলে।

মনে হল, পাথরটাকে সুক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সে। তার একাগ্র দৃষ্টির মগ্নতা ভেঙে ফেলে আমি কথা বললাম, এক্সকিউজ মি! ইংরেজি শব্দটা নিজেরই কানে বাজল।

লোকটা স্রেফ চোখের মণিদুটো, আর তার সমস্ত অস্তিত্বটুকু আগের অবস্থায় বহাল রেখে, এদিকে তাকালো। বড় প্রখর সেই দৃষ্টি! পুনরায় প্রচণ্ড তীক্ষ্ণ মণিদ্বয় ফিরে গেল পাথরে, আরও গভীরভাবে খুঁজতে লাগলো যেন কয়েক মুহুর্ত আগে ফেলে যাওয়া দৃশ্যের বিকিরণ।

আমি ঐ এলাকাটির নাম জানতে চাইছিলাম, কারণ আগে কখনো ওদিকে যাইনি আমি, কিন্ত আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি দেখছেন ওভাবে?

লোকটা সম্বিত ফিরে পেল যেন। পাথরটা লুকিয়ে নিল মুষ্টির অন্তরালে। তারপরে, খানিকটা হেয়ালি করে বলল, খুঁজতেছি, কিভাবে জন্মায়, আর মরে, আর কিভাবে ঘুরতেছে ব্যাপারটা। কিন্ত পাইতেছি না, হারায় গেছে।

এটা আবার কেমন কথা! আমি যোগ করলাম, এই পাথরের মধ্যে আপনি জন্ম, মৃত্যু আর এইটার ঘোরাঘুরি খুঁজতেছেন? লোকটা এমনভাবে কথাগুলো বলেছিল যে আমার মনে হচ্ছিল সে সত্যিই কিছু একটার জন্ম আর মৃত্যু দেখতে পাচ্ছিল। আমার খটকা লাগল, জিনিসটা কোয়েল পাখির ডিম নয় তো!

লোকটা হাসল একটু। আমি বললাম, আমারেও দেখান তো ব্যাপারটা!

সে আমাকে ইশারায় পাশে বসতে বলল। আমি বসলাম। লোকটা সেঁধিয়ে এল আমার দিকে।

তর্জনী আর বৃদ্ধাঙ্গুলের মধ্যে নিয়ে আকাশের আলোর প্রতিকূলে ধরল আমার চোখের সামনে। দেখি পাথরটির সেই শ্বেত স্বচ্ছতার মধ্যে বিকটভাবে নি:শ্বাস নিতে নিতে ঘুর্ণিঝড়ের মত পাঁক খাচ্ছে আমি।

আমি ছিটকে পড়ে গেলাম। হয়তো কয়েক মুহুর্ত অবচেতন কাটল, নয়তো অনেক বছর। যখন চোখ মেলে তাকালাম, দেখি আমি বসে আছি একাকী, বৃক্ষের পদতলে বিস্তৃত ঘনসবুজ আর গম্ভীর শেকড়ে প্রতীক্ষারত শ্যাওলার ওপর।

চুলগুলো আমার পাটের দঁড়ির মত পাঁকিয়ে ঝুলছে গর্দানে। আমার হাতে রয়েছে পাথরটি। আমি সেটা আকাশের আলোর প্রতিকূলে নিয়ে ধরলাম চোখের সামনে। একেবারে সাদা, বরফের মত নিশ্চুপ! কিছুই পেলাম না সেই দৃশ্যের কানাকড়িও! আমি আরো মনোযোগ দিলাম এবং ডুবে গেলাম। কোথায় গেলাম! একটি কন্ঠস্বর কানে বাজল- এক্সকিউজ মি!

লেখকঃ নাহিদুল ইসলাম
সহকারী অধ্যাপক, হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়