ঢাকা ০৪:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ ::
চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’, ভয়াবহ তাণ্ডবের আশঙ্কা আকাশ ও স্থল পথে ভারতে একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলি, বাংলাদেশির মৃত্যু সারাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সুখবর কুমিল্লা জেলা রোভারের কোর্স ফর রোভার মেট কোর্সের সনদ প্রদান বাংলাদেশে ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানালো আবহাওয়া অফিস কুমিল্লা জেলা রোভারের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজে মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপন প্রথম আলো কুমিল্লা বন্ধুসভার ব্যবস্থাপনায় এম সাদেক স্মৃতি পাঠাগার উদ্বোধন বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি কুমিল্লা জেলার উদ্যোগে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল

তাড়াশে স্বাধীনতার ৫২ বছরে নির্মাণ হয়নি সেতু

বাংলাদেশের বার্তা
  • আপডেট সময় : ০২:৪০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৯৬৪০ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাব্বির মির্জা।।

কত এমপি এলো-গেলো আমাগোর কপালে বিরিজ অইলো না। সবাই ভোটের আগে কথা দিয়া যায়, ভোটের পরে কেউ কথা রাখে না। এই বিরিজটার জন্য কত যে কষ্ট করতে অয় আমাগোর। মরার

আগে যদি বিরিজটা দ্যাখে যাতে পারতাম। তা অইলে মরেও শান্তি পাতাম। এমন আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের ধামাইচ গ্রামের বৃদ্ধা আছের আলী (৮০)।
উপজেলার গুমানী নদীতে বাঁশের সাঁকো ও খেয়া ঘাটের নৌকায় এলাকাবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। কিন্তু বহু প্রতীক্ষিত হলেও স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এ নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি এমনটাই দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুমানি নদীর উপর বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে পড়ে আছে। ছোট্ট একটি ঠেলা নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে হাজারো মানুষ। আর ধামাইচ বাজার খেয়াঘাটে একটি ব্রীজের অভাবে বর্ষাকালে নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে পারাপার হচ্ছেন নদীর দুই পাশের হাজার হাজার মানুষ।

দুর্ভোগ এড়াতে উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের ধামাইচ বাজার খেয়াঘাটে গুমানী নদীর ওপর ধামাইচ বাজার থেকে ওপার হেমনগর পর্যন্ত একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এক সঙ্গে ছোট-বড় তিনটি নৌকায় খেয়া পারাপার চলছে। তবুও নদীর দুই পাশের মানুষ যেন নদী পার হতে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ব্রিজ না থাকায় খেয়া নৌকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন নদীর দুই পাড়ের মানুষ। ধামাইচ, ঈশ্বরপুর, নাদোসৈয়দপুর, হেমনগর, নওখাদা, বিন্নাবাড়ি, চরকুশাবাড়ি, দবিরগঞ্জ, রানীগ্রাম, কাটাবাড়ি, বাহাদুর পাড়াসহ কমপক্ষে ২০টি গ্রামের মানুষ ধামাইচ খেয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হয়। সাধারণ লোকজন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় কমলমতি শিক্ষার্থীদের।

ধামাইচ বিল চলন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, নদীর উপর সেতু না থাকায় বিদ্যালয়ের যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়। শুকনো মৌসুমে বাঁশের মাচা ভেঙে যায়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নদী পাড় হতে হয় অামাদের। মাঝে-মধ্যে নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটে।

ধামাইচ গ্রামের প্রবীণ রাজনীতিবীদ তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম মন্ডল বলেন, যারাই এই সংসদীয় আসনে এমপি হয়েছেন তাঁরা সবাই প্রতিশ্রুতি দিলেও ধামাইচ খেয়া ঘাটে এ পর্যন্ত কোন সেতু নির্মাণ করা হয়নি। এলাকার মানুষ গুরুতর অসুস্থ্য হলে নৌকায় তুলে নদী পার করে নিতে হয় শহরে। আর শুষ্ক মৌসুমে ভারে কিংবা মাথায় করে নিতে হয়। এ ভাবেই আমাদের জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

এছাড়াও তিনি আরো বলেন,নদীর এপার-ওপারে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ- মাদ্রাসা। সবুজ পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ধামাইচ বিলচলন উচ্চ বিদ্যালয়, ধামাইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জনতা ব্যাংক ধামাইচ শাখা, নওখাদা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ধামাইচ হাট, চলনবিল অঞ্চলের বিখ্যাত।।রসুনের হাট।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার-হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। প্রতিদিন
তারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হয়।
এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্য শষ্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক
দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষের। ফলে এ এলাকার মানুষের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে
যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

ধামাইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রভাষক আবু হাসিম খোকন বলেন, অনেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রæতি দিয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয়নি।

আমরা অনেক দিন ধরে একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখছি কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে গেল। তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার সারোয়ার ধ্রæব জানান, এমপি মহোদয় একটি ডিউলেটার আমাদের
হেড অফিসে পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলেই আমরা সেতুটি নির্মাণ করতে পারবো।

সেতু নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, সংসদে এ বিষয়ে
একাধিক বার কথা বলেছি। করোনার কারণে দেরি হয়েছে। অচিরেই প্রকল্পটি অনুমোদন হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

তাড়াশে স্বাধীনতার ৫২ বছরে নির্মাণ হয়নি সেতু

আপডেট সময় : ০২:৪০:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল ২০২৩

সাব্বির মির্জা।।

কত এমপি এলো-গেলো আমাগোর কপালে বিরিজ অইলো না। সবাই ভোটের আগে কথা দিয়া যায়, ভোটের পরে কেউ কথা রাখে না। এই বিরিজটার জন্য কত যে কষ্ট করতে অয় আমাগোর। মরার

আগে যদি বিরিজটা দ্যাখে যাতে পারতাম। তা অইলে মরেও শান্তি পাতাম। এমন আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলেছেন সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের ধামাইচ গ্রামের বৃদ্ধা আছের আলী (৮০)।
উপজেলার গুমানী নদীতে বাঁশের সাঁকো ও খেয়া ঘাটের নৌকায় এলাকাবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। কিন্তু বহু প্রতীক্ষিত হলেও স্বাধীনতার ৫২ বছরেও এ নদীর ওপর একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি এমনটাই দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গুমানি নদীর উপর বাঁশের সাঁকোটি ভেঙ্গে পড়ে আছে। ছোট্ট একটি ঠেলা নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পারাপার হচ্ছে হাজারো মানুষ। আর ধামাইচ বাজার খেয়াঘাটে একটি ব্রীজের অভাবে বর্ষাকালে নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে পারাপার হচ্ছেন নদীর দুই পাশের হাজার হাজার মানুষ।

দুর্ভোগ এড়াতে উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের ধামাইচ বাজার খেয়াঘাটে গুমানী নদীর ওপর ধামাইচ বাজার থেকে ওপার হেমনগর পর্যন্ত একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। এক সঙ্গে ছোট-বড় তিনটি নৌকায় খেয়া পারাপার চলছে। তবুও নদীর দুই পাশের মানুষ যেন নদী পার হতে যুদ্ধে লিপ্ত হন। ব্রিজ না থাকায় খেয়া নৌকায় অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে বাধ্য হচ্ছেন নদীর দুই পাড়ের মানুষ। ধামাইচ, ঈশ্বরপুর, নাদোসৈয়দপুর, হেমনগর, নওখাদা, বিন্নাবাড়ি, চরকুশাবাড়ি, দবিরগঞ্জ, রানীগ্রাম, কাটাবাড়ি, বাহাদুর পাড়াসহ কমপক্ষে ২০টি গ্রামের মানুষ ধামাইচ খেয়া ঘাট দিয়ে পারাপার হয়। সাধারণ লোকজন ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় কমলমতি শিক্ষার্থীদের।

ধামাইচ বিল চলন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, নদীর উপর সেতু না থাকায় বিদ্যালয়ের যাতায়াতে সমস্যায় পড়তে হয়। শুকনো মৌসুমে বাঁশের মাচা ভেঙে যায়। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও নদী পাড় হতে হয় অামাদের। মাঝে-মধ্যে নৌকাডুবির ঘটনাও ঘটে।

ধামাইচ গ্রামের প্রবীণ রাজনীতিবীদ তাড়াশ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম মন্ডল বলেন, যারাই এই সংসদীয় আসনে এমপি হয়েছেন তাঁরা সবাই প্রতিশ্রুতি দিলেও ধামাইচ খেয়া ঘাটে এ পর্যন্ত কোন সেতু নির্মাণ করা হয়নি। এলাকার মানুষ গুরুতর অসুস্থ্য হলে নৌকায় তুলে নদী পার করে নিতে হয় শহরে। আর শুষ্ক মৌসুমে ভারে কিংবা মাথায় করে নিতে হয়। এ ভাবেই আমাদের জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

এছাড়াও তিনি আরো বলেন,নদীর এপার-ওপারে রয়েছে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ- মাদ্রাসা। সবুজ পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, ধামাইচ বিলচলন উচ্চ বিদ্যালয়, ধামাইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জনতা ব্যাংক ধামাইচ শাখা, নওখাদা ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, ধামাইচ হাট, চলনবিল অঞ্চলের বিখ্যাত।।রসুনের হাট।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাজার-হাজার শিক্ষার্থী পড়ালেখা করেন। প্রতিদিন
তারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হয়।
এছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত খাদ্য শষ্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণে ব্যাপক
দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এসব এলাকার মানুষের। ফলে এ এলাকার মানুষের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে
যানবাহন নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

ধামাইচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রভাষক আবু হাসিম খোকন বলেন, অনেকেই জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে আমাদের প্রতিশ্রæতি দিয়ে যায়। কিন্তু নির্বাচনের পর আর কেউ আমাদের খোঁজ-খবর নেয়নি।

আমরা অনেক দিন ধরে একটি ব্রিজের স্বপ্ন দেখছি কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন যেন স্বপ্নই রয়ে গেল। তাড়াশ উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার সারোয়ার ধ্রæব জানান, এমপি মহোদয় একটি ডিউলেটার আমাদের
হেড অফিসে পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি পাশ হলেই আমরা সেতুটি নির্মাণ করতে পারবো।

সেতু নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, সংসদে এ বিষয়ে
একাধিক বার কথা বলেছি। করোনার কারণে দেরি হয়েছে। অচিরেই প্রকল্পটি অনুমোদন হবে।