ঢাকা ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ ::

পরিবারকে সময় দিতে ব্যস্ততা বা অযুহাত নয়//ডি.এইচ.রনি

বাংলাদেশের বার্তা
  • আপডেট সময় : ০৫:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২
  • / ৯৬০৯ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ব্যস্ততার তাগিদে আমরা সবাই যেন চলমান এক যান। কাজে-কর্মে, হাটে-বাজারে চাকরিতে বা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ছুটে চলি দুরন্ত গতিতে।

ছুটতে ছুটতে, চলতে-চলতে ভুলে যাই আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকে, ভুলে যাই নিজ পরিবারকে। আপনি হয়ত ভাবছেন এ আবার কেমন কথা,আমি তো পরিবারের সাথেই আছি।

ওদের জন্যই তো সব করছি। হ্যাঁ, আপনি পরিবারের সাথেই আছেন, ওদের জন্যই এত কষ্ট করছেন- কথাটি ঠিক,কিন্তু, আপনি জানেন না সাথে থাকা মানেই কাছাকাছি থাকা নয়।

সব কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু আসল কাজ করছেন না,আপনি কি আপনার মা-বাবার সাথে যথেষ্ঠ পরিমান সময় ব্যয় করেন? ছোট বেলায় একটু চোখের আড়াল হলেই মা-বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মনটা আকুল হয়ে উঠত।

আজ আপনার বৃদ্ধ মা-বাবা আপনার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষায় থাকেন, আপনি তা বুঝতেও পারেন না। আপনার একটু সময় দেয়া, একটু কথা বলা, একটু বুকে টেনে নেয়া তাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলবে,তাদের আরও বেশি দিন বেঁচে থাকার ইচ্ছে করবে,এটা বুঝার সময় আপনার নেই।

আপনি যদি বাবা, মা হয়ে থাকেন তবে সন্তানকে কি যথেষ্ট সময় দেন? আপনার সন্তান কি আপনার সাথে সমস্যা, সুখ-দুঃখ শেয়ার করে? ।

সন্তানের দিকে তাকালে ওদের ভেতরটা বাবা-মায়ের কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখা যাবে,সন্তানের বাবা-মায়ের কাছে লুকানোর কিছু নেই,যদি লুকানো থাকে আপনি তো জানেন না।

তবে বলবো আপনার ওভাবে তাকিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। ওদের ভেতরটা আয়নার মতো নাকি অন্ধকারাছন্ন। আপনি আপনার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সবই তো করছেন।

কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি বোধ আছে কিনা,সে আপনাকে বন্ধু ভাবে কি না। আপনি কি তাকে সঙ্গ দেন। সঙ্গ মানে শুধু পাশাপাশি থাকা নয়,সঙ্গহীনতায় স্বামী-স্ত্রীর দূরত্ব বেড়ে যায়। অল্প কথাতেই প্রায়ই খিটিমিটি লেগে যায়।

পরিবারের দেখাশোনা, খোজ খবর নেওয়া, সঙ্গ দেওয়ার অভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আপনার পরিবার। আপনি হাজার কোটি টাকার পেছনে ছুটেও দিন শেষে সফলতার মুখ দেখলেও পরে যদি পরিবারের দিক থেকে থাকেন অসুখী তবে সেটার গুরুত্ব টাই বি কি? এখন ভেবে দেখার বিষয় পরিবার সন্তানকে সময় না দিয়ে ছুটে চলার লাভ কতটুকু।

পরিবারই হলো রাষ্ট্র ও সমাজের মূল ভিত্তি। পরিবার থেকেই একজন নাগরিকের সৃষ্টি হয়। পরিবারই হলো মানুষ গড়ার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। ভালবাসার জন্ম হয় পরিবার থেকেই, ভালবাসা বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করে এই পরিবারেই। আর সেই পরিবারেই যদি সব সময় অশান্তি লেগে থাকে, ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে, তবে সন্তানরাও কলহ প্রিয় হয়ে উঠে।

সন্তানের মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভালবাসার বিকল্প নেই। পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে বা মা-বাবা পরস্পরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে সন্তানরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে।

আবার অনেক পরিবারে মেয়ে সন্তানের চেয়ে ছেলে সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এই পাথর্ক্য মেয়ে সন্তানটির উপর নেতীবাচক প্রভাব পড়ে। আপনি জীবনে অনেক কিছু পেয়েছেন, অনেক কিছু হয়েছেন। কিন্তু আপনার এই আনন্দ বা প্রাপ্তির সঙ্গে যদি পরিবার না থাকে তা হলে এই প্রাপ্তির আনন্দ কোথায়।

একটি মানুষ যত বড়ই হোক না কেন তার সম্পুর্ন আশা-ভরসার কেন্দ্র থাকে পরিবার। পরিবারের সুখ-দুঃখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। পরিবারের সুখই হচ্ছে প্রকৃত সুখ। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি ব যত্নশীল হতে হবে,তাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তাতে একদিকে যেমন আপনি ভাল থাকবেন তেমনি দেশটাও সুনাগরিকে ভরে যাবে। তাই আসুন আজ থেকে দৃঢ়তার সাথে শপথ নেই, নিজের পরিবারকে সময় ও সঙ্গ দেওয়ার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবো।

লেখকঃ দেলোয়ার হোসেন রনি
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

http://এইচ/কে

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

পরিবারকে সময় দিতে ব্যস্ততা বা অযুহাত নয়//ডি.এইচ.রনি

আপডেট সময় : ০৫:৪০:১১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ জুলাই ২০২২

ব্যস্ততার তাগিদে আমরা সবাই যেন চলমান এক যান। কাজে-কর্মে, হাটে-বাজারে চাকরিতে বা জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য ছুটে চলি দুরন্ত গতিতে।

ছুটতে ছুটতে, চলতে-চলতে ভুলে যাই আমাদের চারপাশের মানুষগুলোকে, ভুলে যাই নিজ পরিবারকে। আপনি হয়ত ভাবছেন এ আবার কেমন কথা,আমি তো পরিবারের সাথেই আছি।

ওদের জন্যই তো সব করছি। হ্যাঁ, আপনি পরিবারের সাথেই আছেন, ওদের জন্যই এত কষ্ট করছেন- কথাটি ঠিক,কিন্তু, আপনি জানেন না সাথে থাকা মানেই কাছাকাছি থাকা নয়।

সব কাজ করছেন ঠিকই কিন্তু আসল কাজ করছেন না,আপনি কি আপনার মা-বাবার সাথে যথেষ্ঠ পরিমান সময় ব্যয় করেন? ছোট বেলায় একটু চোখের আড়াল হলেই মা-বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য মনটা আকুল হয়ে উঠত।

আজ আপনার বৃদ্ধ মা-বাবা আপনার জন্য ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষায় থাকেন, আপনি তা বুঝতেও পারেন না। আপনার একটু সময় দেয়া, একটু কথা বলা, একটু বুকে টেনে নেয়া তাদের জীবনকে আনন্দময় করে তুলবে,তাদের আরও বেশি দিন বেঁচে থাকার ইচ্ছে করবে,এটা বুঝার সময় আপনার নেই।

আপনি যদি বাবা, মা হয়ে থাকেন তবে সন্তানকে কি যথেষ্ট সময় দেন? আপনার সন্তান কি আপনার সাথে সমস্যা, সুখ-দুঃখ শেয়ার করে? ।

সন্তানের দিকে তাকালে ওদের ভেতরটা বাবা-মায়ের কাছে আয়নার মতো পরিষ্কার দেখা যাবে,সন্তানের বাবা-মায়ের কাছে লুকানোর কিছু নেই,যদি লুকানো থাকে আপনি তো জানেন না।

তবে বলবো আপনার ওভাবে তাকিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। ওদের ভেতরটা আয়নার মতো নাকি অন্ধকারাছন্ন। আপনি আপনার স্ত্রীর ভরণ-পোষণ সবই তো করছেন।

কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন তার মধ্যে আত্মতৃপ্তি বোধ আছে কিনা,সে আপনাকে বন্ধু ভাবে কি না। আপনি কি তাকে সঙ্গ দেন। সঙ্গ মানে শুধু পাশাপাশি থাকা নয়,সঙ্গহীনতায় স্বামী-স্ত্রীর দূরত্ব বেড়ে যায়। অল্প কথাতেই প্রায়ই খিটিমিটি লেগে যায়।

পরিবারের দেখাশোনা, খোজ খবর নেওয়া, সঙ্গ দেওয়ার অভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে আপনার পরিবার। আপনি হাজার কোটি টাকার পেছনে ছুটেও দিন শেষে সফলতার মুখ দেখলেও পরে যদি পরিবারের দিক থেকে থাকেন অসুখী তবে সেটার গুরুত্ব টাই বি কি? এখন ভেবে দেখার বিষয় পরিবার সন্তানকে সময় না দিয়ে ছুটে চলার লাভ কতটুকু।

পরিবারই হলো রাষ্ট্র ও সমাজের মূল ভিত্তি। পরিবার থেকেই একজন নাগরিকের সৃষ্টি হয়। পরিবারই হলো মানুষ গড়ার প্রথম শিক্ষাকেন্দ্র। ভালবাসার জন্ম হয় পরিবার থেকেই, ভালবাসা বিকশিত ও পরিপূর্ণতা লাভ করে এই পরিবারেই। আর সেই পরিবারেই যদি সব সময় অশান্তি লেগে থাকে, ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে, তবে সন্তানরাও কলহ প্রিয় হয়ে উঠে।

সন্তানের মানসিক বিকাশে বাবা-মায়ের ভালবাসার বিকল্প নেই। পরিবারে মাকে নির্যাতিত হতে দেখলে বা মা-বাবা পরস্পরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলে সন্তানরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে।

আবার অনেক পরিবারে মেয়ে সন্তানের চেয়ে ছেলে সন্তানকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। এই পাথর্ক্য মেয়ে সন্তানটির উপর নেতীবাচক প্রভাব পড়ে। আপনি জীবনে অনেক কিছু পেয়েছেন, অনেক কিছু হয়েছেন। কিন্তু আপনার এই আনন্দ বা প্রাপ্তির সঙ্গে যদি পরিবার না থাকে তা হলে এই প্রাপ্তির আনন্দ কোথায়।

একটি মানুষ যত বড়ই হোক না কেন তার সম্পুর্ন আশা-ভরসার কেন্দ্র থাকে পরিবার। পরিবারের সুখ-দুঃখ মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করে। পরিবারের সুখই হচ্ছে প্রকৃত সুখ। তাই পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি ব যত্নশীল হতে হবে,তাদের ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।

তাতে একদিকে যেমন আপনি ভাল থাকবেন তেমনি দেশটাও সুনাগরিকে ভরে যাবে। তাই আসুন আজ থেকে দৃঢ়তার সাথে শপথ নেই, নিজের পরিবারকে সময় ও সঙ্গ দেওয়ার মাধ্যমে পারিবারিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নেবো।

লেখকঃ দেলোয়ার হোসেন রনি
সাধারণ সম্পাদক,
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম,
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

http://এইচ/কে