ঢাকা ০৬:১৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ ::

ফরিদপুর -৪ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী?

বাংলাদেশের বার্তা
  • আপডেট সময় : ০২:৩৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৯৬২৬ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সোবাহান সৈকত (বিশেষ প্রতিনিধি) ফরিদপুর।

স্বাধীনতার পর থেকেই ফরিদপুর -৪ আসন আওয়ামীলীগের দক্ষলে ছিল। ফরিদপুর জেলার সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন গঠিত হয়। সে এই আসনে সময় আওয়ামীলীগের সাংসদ ছিলেন এডভোকেট মোশাররফ হোসেন। ১৯৮৬ সালে একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী অধ্যক্ষ আজহারুল হক সাংসদ নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে আবারো আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকে সাংসদ হন এডভোকেট মোশাররফ হোসেন। এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও এডভোকেট মোশাররফ হোসেন প্রতিকে নৌকা বিজয়ী হয়। ১৯৯৯ সালের ১৯ আগস্ট এডভোকেট মোশাররফ হোসেন মারা গেলে উপনির্বাচনে তার স্ত্রী বেগম সালেহা মোশাররফ সাংসদ নির্বাচিত হন। এর পরই মুলত শুরু হয় আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্বের সংকট। বেগম সালেহা মোশাররফ বেশি বয়স্ক হওয়ায় ঠিকমত সংগঠনে সময় দিতে পারতেন না।

এ সুযোগ কে কাজে লাগাতে অনেকেই সেই সময় ফরিদপুর -৪ আসনের আওয়ামীলীগের রাজনীতির হাল ধরতে ছুটে আসেন। তার মধ্যে, এ,কে আজাদ, গোলাম মাওলা রনি, আক্তারুজ্জামান তারা, করিম গাজী, সামসুল হক কাড়াল সহ আরো অনেকে গোপনেও কার্য্যক্রম চালিয়েছিলেন আওয়ামীলীগের হাল ধরতে। শুরু হয় ফরিদপুর ৪ আসনের আওয়ামীলীগের কর্মীদের মাঝে গ্রুপিং।কালের বির্বতনে এরা সবাই ফরিদপুর ৪ আসনের রাজনীতি থেকে হারিয়ে যান। ২০০১ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামীলিগের প্রার্থী হন সাবেক পানি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। এবং তিনি নৌকা প্রতিকে বিজয়ী লাভ করলেও আসনটি তিনি ছেড়ে দেন।

উপনির্বাচনে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী পরিবারের পুত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ বিজয়ী হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর- ৪ আসনের সীমানার পরিবর্তন ঘটে। ভাংগা উপজেলাকে এই আসনের সাথে যোগ করা হয় এবং সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন কেটে নগরপকান্দার সাথে যোগ করা হয়। তখন থেকেই ফরিদপুর -৪ আসন গঠিত হয়, ভাংগা সদরপুর, চরভদ্রাসন নিয়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভাংগা কাজী পরিবারের পুত্রবধু কাজী নিলুফার জাফরুল্লাহ এই আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন পান। তার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ছিলেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সাল। কিন্ত ভোটে নির্বাচিত হন কাজী নিলুফার জাফরুল্লাহ।

কিন্ত কাজী নিলুফার জাফরুল্লাহ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের মাঝে নতুন এক সংকটের সৃস্টি হয়। দলীয় নেতা কর্মীদের অবমুল্যায়ন, এলাকায় না আসা, কারো কোন খোজ খবর না রাখা, এমনকি সরকারী প্রোগ্রাম বা জাতীয় প্রোগ্রামেও কাজী নিলুফার জাফরুল্ললাহর অনুপস্থিতি কর্মীদের মাঝে হতাশার সৃস্টি করে।এরই মাঝে ঘনিয়ে আসে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বি,এন,,পি কোন প্রার্থী না থাকায় অন্যদিকে কাদের মোল্যার ফাসির কারনে জামায়তের নেতাকর্মীরা দিশেহারা, অপরদিকে কাজী নিলুফার জাফরুল্লাহর সাথে কর্মীদের মাঝে দুরত্ব তৈরী, অবমুল্যায়ন এসবের মাঝে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে প্রথমে শিবচরের রাজনৈতিক পরিবার মরহুম চৌধুরী ইলিয়াস আহম্মেদ দাদা ভাইয়ের এক পুত্র লিখন চৌধুরী প্রচার প্রচারনার পোস্টার লাগাতে আসলে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহর কিছু নেতা কর্মী তাদের বাধা দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ছিড়ে ফেলে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিবচরের চৌধুরী পরিবারের সম্মানে আঘাত লাগে।তাই চৌধুরী পরিবারের আরেক পুত্র হঠাৎ ধুমকেতুর মত চৌধুরী মজিবর রহমান নিক্সন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয় আনারস মার্কা নিয়ে নির্বাচনে হাজির হন। শুরু হতে থাকে সদরপুর চরভদ্রাসন ভাংগার আওয়ামী জনগনের মাঝে নতুন পথ, নিক্সন চৌধুরীর রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও বক্তব্য দিয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।

তৃনমুল পর্যায়ের ভোটার ও নেতা কর্মীদের মুল্যায়ন, জনগনের খোজ খবর নিতে হাটে ঘাটে মাঠে ব্যাপক চষে বেড়ান৷ ঝাকে ঝাকে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা নিক্সন চৌধুরীর সাথে যোগ দিতে থাকেন। চাপে পড়ে যায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহ। শুরু হয়ে যায় চাচা ভাতিজার রাজনৈতিক লড়াই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা র প্রার্থীর পক্ষে সদরপুরে জনসমাবেশ করে কাজী জাফরুল্লাহর জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। তবুও ভোটে হেরে যান নৌকা প্রতিকের কাজী জাফরুল্লাহ। ফরিদপুর -৪ আসনে আওয়ামী রাজনীতীতে শুরু হয় দলীয় বাদানুবাদ ও মঞ্চে বক্তৃতায় অশ্লীল ভাষায় চাচা- ভাতিজার একে অপরের বিরুদ্ধে গালিগালাজ।

সেখানে কাজী জাফরুল্লাহ নিক্সন চৌধুরীর কাছে কোনঠাসা হয়ে পরেন৷ কাজী জাফরুল্লাহর কাছ থেকে ঝাকে ঝাকে নেতা কর্মীরা নিক্সন চৌধুরীর কাছে চলে যেতে থাকেন। এছাড়া ভাংগা, সদরপুর, চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাও নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চাচার পক্ষে কিছু প্রবীন ও প্রভাবশালী পরিবারের লোকজন থাকলেও বিভিন্ন সভা সমাবেশে ওই সমস্ত লোকজনদের বিরুদ্ধে নিক্সন চৌধুরীর গালিগালাজ ও হুমকি ধামকির কাছে অনেকে অসহায়ত্ববোধ করেন।

কেউ কেউ সম্মান বাচাতে নিক্সন চৌধুরীর কাছে যোগ দেন, কেউ কেউ সম্মান বাচাতে রাজনীতি থেকে আত্নগোপনে চলে যান।। নিক্সন চৌধুরী তিন উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নমুলক কাজ করেন। রাস্তা ঘাট ব্রীজ নির্মান সহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় ভবন নির্মান, বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এলাকায় ব্যাপক সুনাম কুড়ান সাধারন ভোটারদের মাঝে। এছাড়া সরকারী বেসরকারী সকল প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকেন। ওয়াজ মাহফিল থেকে শুরু করে খেলাধুলা, নাটক থিয়েটার সব কিছুতেই নিক্সন চৌধুরীর উপস্থিতি জনতার মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

অন্যদিকে অনেকটা নির্বাসনে যায় কাজী জাফরুল্লাহর রাজনীতি। এভাবে ৫ বছর অতিবাহিত হলে আসে২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ।। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহন না করার ফলে ভোটের মাঠে প্রার্থী সেই নৌকার কাজী জাফরুল্লাহ অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিংহ মার্কা নিয়ে আসেন নিক্সন চৌধুরী।। আওয়ামীলীগের কোন পদ পদবী না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিক্সন চৌধুরী অন্যান্য সংগঠনের ভোটারদের কাছে টানেন।

বিশেষ করে সদরপুর, চরভদ্রাসন ও ভাংগার উন্নয়নে তার অবদান সাধারন ভোটারদের সমর্থন তাকে জয়ের লক্ষ্যে নিয়ে যায়। নৌকার প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী থাকলেও তার কাছ থেকে নেতাকর্মীরা চলে যেতে থাকেন নিক্সন চৌধুরীর কাছে। ফলে তিনি অনেকটা একা হয়ে যান। তবুও ২০১৯ সালে সারাদেশের নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দীতা পুর্ন নির্বাচনের মাঠ ছিল ফরিদপুর -৪ আসন। কাজী জাফরুল্লাহ সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েও নির্বাচনে তার ক্ষমতার কোন প্রভাব দেখাতে পারেননি। এমনকি মাঠ পর্যায়ে প্রসাশনিক ভাবেও তেমন কোন প্রভাব দেখাতে পারেন নি।

ফলে যারা নৌকার কর্মী ছিল তারা হতাশার মধ্যে পরে যায়, এমনকি নৌকার কর্মীরা প্রকাশ্যে নির্বাচন থেকে দূরে চলে যায়। অন্যদিকে ভোটের মাঠে কর্মীদের চাংগা রাখেন নিক্সন চৌধুরী। কোন কর্মীর কোন বিপদ হলে ছুটে যান তার পাশে। পুলিশি হয়রানী হলে থানা অবরোধ রাস্তা অবরোধের করার হুমকি দিত। এমন পরিস্থিতিতেও হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচন হয় এবং সিংহ মার্কার প্রার্থী নৌকার প্রার্থীকে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যাবধানে আরেকবার পরাজিত করেন।

চুপসে যান আওয়ামীলীগের প্রবীন ও প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। সবচেয়ে দু:খজনক বিষয় হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের অনেকের বাড়িঘরে হামলা হয়, অনেকে এলাকা ছেরে আত্নগোপনে চলে যান। অনেকটা অসহায় হয়ে পরেন কাজী জাফরুল্লাহ। আরেকদফা ভাংগনের মুখে পরেন কাজী জাফরুল্লাহ।

ইতোমধ্যে হঠাৎ করে আওয়ামীলীগের যুবলীগ কমিটির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ পান নিক্সন চৌধুরী। চিন্তার ভাজ পরে কাজী জাফরুল্লাহর নেতাকর্মীদের মাঝে। দলীয় শ্লোগান দিয়ে সভা সমাবেশ মিটিং করে চলেছেন নিক্সন চৌধুরী, অন্যদিকে কাজী জাফরুল্লাহ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে মরিয়া। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে গুঞ্জন শুরু হয়েছে কে হবে আগামীতে ফরিদপুর ৪ আসনে নৌকার কান্ডারী।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ফরিদপুর -৪ আসনে কে হচ্ছেন নৌকার কান্ডারী?

আপডেট সময় : ০২:৩৭:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ অগাস্ট ২০২৩

সোবাহান সৈকত (বিশেষ প্রতিনিধি) ফরিদপুর।

স্বাধীনতার পর থেকেই ফরিদপুর -৪ আসন আওয়ামীলীগের দক্ষলে ছিল। ফরিদপুর জেলার সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলা নিয়ে ফরিদপুর-৪ আসন গঠিত হয়। সে এই আসনে সময় আওয়ামীলীগের সাংসদ ছিলেন এডভোকেট মোশাররফ হোসেন। ১৯৮৬ সালে একবার জাতীয় পার্টির প্রার্থী অধ্যক্ষ আজহারুল হক সাংসদ নির্বাচিত হন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে আবারো আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকে সাংসদ হন এডভোকেট মোশাররফ হোসেন। এবং ১৯৯৬ সালের নির্বাচনেও এডভোকেট মোশাররফ হোসেন প্রতিকে নৌকা বিজয়ী হয়। ১৯৯৯ সালের ১৯ আগস্ট এডভোকেট মোশাররফ হোসেন মারা গেলে উপনির্বাচনে তার স্ত্রী বেগম সালেহা মোশাররফ সাংসদ নির্বাচিত হন। এর পরই মুলত শুরু হয় আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃত্বের সংকট। বেগম সালেহা মোশাররফ বেশি বয়স্ক হওয়ায় ঠিকমত সংগঠনে সময় দিতে পারতেন না।

এ সুযোগ কে কাজে লাগাতে অনেকেই সেই সময় ফরিদপুর -৪ আসনের আওয়ামীলীগের রাজনীতির হাল ধরতে ছুটে আসেন। তার মধ্যে, এ,কে আজাদ, গোলাম মাওলা রনি, আক্তারুজ্জামান তারা, করিম গাজী, সামসুল হক কাড়াল সহ আরো অনেকে গোপনেও কার্য্যক্রম চালিয়েছিলেন আওয়ামীলীগের হাল ধরতে। শুরু হয় ফরিদপুর ৪ আসনের আওয়ামীলীগের কর্মীদের মাঝে গ্রুপিং।কালের বির্বতনে এরা সবাই ফরিদপুর ৪ আসনের রাজনীতি থেকে হারিয়ে যান। ২০০১ সালের নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামীলিগের প্রার্থী হন সাবেক পানি মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। এবং তিনি নৌকা প্রতিকে বিজয়ী লাভ করলেও আসনটি তিনি ছেড়ে দেন।

উপনির্বাচনে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী চৌধুরী পরিবারের পুত্র স্বতন্ত্র প্রার্থী চৌধুরী আকমল ইবনে ইউসুফ বিজয়ী হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর- ৪ আসনের সীমানার পরিবর্তন ঘটে। ভাংগা উপজেলাকে এই আসনের সাথে যোগ করা হয় এবং সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন কেটে নগরপকান্দার সাথে যোগ করা হয়। তখন থেকেই ফরিদপুর -৪ আসন গঠিত হয়, ভাংগা সদরপুর, চরভদ্রাসন নিয়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভাংগা কাজী পরিবারের পুত্রবধু কাজী নিলুফার জাফরুল্লাহ এই আসনে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিকে মনোনয়ন পান। তার প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী ছিলেন জাকের পার্টির চেয়ারম্যান পীরজাদা মোস্তফা আমীর ফয়সাল। কিন্ত ভোটে নির্বাচিত হন কাজী নিলুফার জাফরুল্লাহ।

কিন্ত কাজী নিলুফার জাফরুল্লাহ নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের মাঝে নতুন এক সংকটের সৃস্টি হয়। দলীয় নেতা কর্মীদের অবমুল্যায়ন, এলাকায় না আসা, কারো কোন খোজ খবর না রাখা, এমনকি সরকারী প্রোগ্রাম বা জাতীয় প্রোগ্রামেও কাজী নিলুফার জাফরুল্ললাহর অনুপস্থিতি কর্মীদের মাঝে হতাশার সৃস্টি করে।এরই মাঝে ঘনিয়ে আসে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বি,এন,,পি কোন প্রার্থী না থাকায় অন্যদিকে কাদের মোল্যার ফাসির কারনে জামায়তের নেতাকর্মীরা দিশেহারা, অপরদিকে কাজী নিলুফার জাফরুল্লাহর সাথে কর্মীদের মাঝে দুরত্ব তৈরী, অবমুল্যায়ন এসবের মাঝে ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে প্রথমে শিবচরের রাজনৈতিক পরিবার মরহুম চৌধুরী ইলিয়াস আহম্মেদ দাদা ভাইয়ের এক পুত্র লিখন চৌধুরী প্রচার প্রচারনার পোস্টার লাগাতে আসলে আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহর কিছু নেতা কর্মী তাদের বাধা দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে পোস্টার ছিড়ে ফেলে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিবচরের চৌধুরী পরিবারের সম্মানে আঘাত লাগে।তাই চৌধুরী পরিবারের আরেক পুত্র হঠাৎ ধুমকেতুর মত চৌধুরী মজিবর রহমান নিক্সন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয় আনারস মার্কা নিয়ে নির্বাচনে হাজির হন। শুরু হতে থাকে সদরপুর চরভদ্রাসন ভাংগার আওয়ামী জনগনের মাঝে নতুন পথ, নিক্সন চৌধুরীর রাজনৈতিক দুরদর্শিতা ও বক্তব্য দিয়ে মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে দেয়।

তৃনমুল পর্যায়ের ভোটার ও নেতা কর্মীদের মুল্যায়ন, জনগনের খোজ খবর নিতে হাটে ঘাটে মাঠে ব্যাপক চষে বেড়ান৷ ঝাকে ঝাকে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা নিক্সন চৌধুরীর সাথে যোগ দিতে থাকেন। চাপে পড়ে যায় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহ। শুরু হয়ে যায় চাচা ভাতিজার রাজনৈতিক লড়াই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নৌকা র প্রার্থীর পক্ষে সদরপুরে জনসমাবেশ করে কাজী জাফরুল্লাহর জন্য ভোট প্রার্থনা করেন। তবুও ভোটে হেরে যান নৌকা প্রতিকের কাজী জাফরুল্লাহ। ফরিদপুর -৪ আসনে আওয়ামী রাজনীতীতে শুরু হয় দলীয় বাদানুবাদ ও মঞ্চে বক্তৃতায় অশ্লীল ভাষায় চাচা- ভাতিজার একে অপরের বিরুদ্ধে গালিগালাজ।

সেখানে কাজী জাফরুল্লাহ নিক্সন চৌধুরীর কাছে কোনঠাসা হয়ে পরেন৷ কাজী জাফরুল্লাহর কাছ থেকে ঝাকে ঝাকে নেতা কর্মীরা নিক্সন চৌধুরীর কাছে চলে যেতে থাকেন। এছাড়া ভাংগা, সদরপুর, চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরাও নিক্সন চৌধুরীর সমর্থিত চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চাচার পক্ষে কিছু প্রবীন ও প্রভাবশালী পরিবারের লোকজন থাকলেও বিভিন্ন সভা সমাবেশে ওই সমস্ত লোকজনদের বিরুদ্ধে নিক্সন চৌধুরীর গালিগালাজ ও হুমকি ধামকির কাছে অনেকে অসহায়ত্ববোধ করেন।

কেউ কেউ সম্মান বাচাতে নিক্সন চৌধুরীর কাছে যোগ দেন, কেউ কেউ সম্মান বাচাতে রাজনীতি থেকে আত্নগোপনে চলে যান।। নিক্সন চৌধুরী তিন উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নমুলক কাজ করেন। রাস্তা ঘাট ব্রীজ নির্মান সহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় ভবন নির্মান, বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এলাকায় ব্যাপক সুনাম কুড়ান সাধারন ভোটারদের মাঝে। এছাড়া সরকারী বেসরকারী সকল প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকেন। ওয়াজ মাহফিল থেকে শুরু করে খেলাধুলা, নাটক থিয়েটার সব কিছুতেই নিক্সন চৌধুরীর উপস্থিতি জনতার মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে।

অন্যদিকে অনেকটা নির্বাসনে যায় কাজী জাফরুল্লাহর রাজনীতি। এভাবে ৫ বছর অতিবাহিত হলে আসে২০১৯ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ।। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহন না করার ফলে ভোটের মাঠে প্রার্থী সেই নৌকার কাজী জাফরুল্লাহ অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী সিংহ মার্কা নিয়ে আসেন নিক্সন চৌধুরী।। আওয়ামীলীগের কোন পদ পদবী না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নিক্সন চৌধুরী অন্যান্য সংগঠনের ভোটারদের কাছে টানেন।

বিশেষ করে সদরপুর, চরভদ্রাসন ও ভাংগার উন্নয়নে তার অবদান সাধারন ভোটারদের সমর্থন তাকে জয়ের লক্ষ্যে নিয়ে যায়। নৌকার প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহ জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী থাকলেও তার কাছ থেকে নেতাকর্মীরা চলে যেতে থাকেন নিক্সন চৌধুরীর কাছে। ফলে তিনি অনেকটা একা হয়ে যান। তবুও ২০১৯ সালে সারাদেশের নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দীতা পুর্ন নির্বাচনের মাঠ ছিল ফরিদপুর -৪ আসন। কাজী জাফরুল্লাহ সরকার দলীয় নৌকার প্রার্থী ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েও নির্বাচনে তার ক্ষমতার কোন প্রভাব দেখাতে পারেননি। এমনকি মাঠ পর্যায়ে প্রসাশনিক ভাবেও তেমন কোন প্রভাব দেখাতে পারেন নি।

ফলে যারা নৌকার কর্মী ছিল তারা হতাশার মধ্যে পরে যায়, এমনকি নৌকার কর্মীরা প্রকাশ্যে নির্বাচন থেকে দূরে চলে যায়। অন্যদিকে ভোটের মাঠে কর্মীদের চাংগা রাখেন নিক্সন চৌধুরী। কোন কর্মীর কোন বিপদ হলে ছুটে যান তার পাশে। পুলিশি হয়রানী হলে থানা অবরোধ রাস্তা অবরোধের করার হুমকি দিত। এমন পরিস্থিতিতেও হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচন হয় এবং সিংহ মার্কার প্রার্থী নৌকার প্রার্থীকে প্রায় ৪০ হাজার ভোটের ব্যাবধানে আরেকবার পরাজিত করেন।

চুপসে যান আওয়ামীলীগের প্রবীন ও প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ। সবচেয়ে দু:খজনক বিষয় হলো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের অনেকের বাড়িঘরে হামলা হয়, অনেকে এলাকা ছেরে আত্নগোপনে চলে যান। অনেকটা অসহায় হয়ে পরেন কাজী জাফরুল্লাহ। আরেকদফা ভাংগনের মুখে পরেন কাজী জাফরুল্লাহ।

ইতোমধ্যে হঠাৎ করে আওয়ামীলীগের যুবলীগ কমিটির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ পান নিক্সন চৌধুরী। চিন্তার ভাজ পরে কাজী জাফরুল্লাহর নেতাকর্মীদের মাঝে। দলীয় শ্লোগান দিয়ে সভা সমাবেশ মিটিং করে চলেছেন নিক্সন চৌধুরী, অন্যদিকে কাজী জাফরুল্লাহ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে মরিয়া। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে গুঞ্জন শুরু হয়েছে কে হবে আগামীতে ফরিদপুর ৪ আসনে নৌকার কান্ডারী।