• দূর্ঘটনা

    মায়ের পরকীয়ার জেরে নোয়াখালীতে মা মেয়ে খুন

      প্রতিনিধি ১৪ জুন ২০২৩ , ৫:০১:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

    নোয়াখালী জেলা প্রতিনিধি। 

    সম্পর্কটা শুরু রং নাম্বার দিয়ে, শেষ হলো মা-মেয়ের জীবন বলিদানের মধ্য দিয়ে। ১৪ ই জুন বেলা ১১ টায় নোয়াখালী মাইজদী গুপ্তাংক বালিংটন মোড়ে নিজ বাসায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মা – নুরনাহার বেগম (৪০) ও মেয়ে – ফাতেহা আজিম প্রিয়ন্তী (১৬)।

    পুলিশ সুপার জানান, প্রায় চার মাস আগে নুর নাহার এর সাথে রং নাম্বারে পরিচয় হয় আলতাফ হোসেনের । পরিচয়ের পর ধারাবাহিক কথোপকথনে সম্পর্ক গড়ায় পরকীয়ায়। আলতাফ হোসেন (২৮) একজন ওমান প্রবাসী হোটেল শ্রমিক। ধার দেনা করে সে প্রবাসে পাড়ি জমায়। প্রবাস জীবনে খুব একটা সুবিধা করতে না পারার কথা জানাই সে নুর নাহারকে।

    নুর নাহার আলতাফ কে জানায়, যে সামান্য টাকা দেশের মাটিতে ইনকাম করা যায় সেই টাকার জন্য বিদেশে বসে থেকে কি লাভ ? আলতাফ জানাই সে দেশে ধার দেনা করে বিদেশ এসেছে দেশে গিয়ে কোন কিছু করার মতো পুঁজি তার নেই। উত্তরে নুরনাহার আলতাফকে আশ্বস্ত করে তুমি দেশে চলে এসো তোমার ব্যবসার টাকা আমি দেব। আর দেশে এসে তুমি আমাদের বাসায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকবে আমার পাশাপাশি।

    যেই কথা সেই কাজ পরকীয়া প্রেমের মোহে নিজের বাড়িতে না জানিয়ে প্রেমিকার প্রলোভনে বিবাহিত প্রেমিক আলতাফ ওমানের ভিসা বাতিল করে ৮ ই জুন দেশের মাটিতে পা রাখে। অবস্থান নেয় দত্তেরহাট মাসুদের আবাসিক ম্যাস এ, ওখান থেকেই প্রায়ই যাতায়াত শুরু করে নুরনাহারের বাসায়। একাধিকবার আসা যাওয়াতেও নুর নাহারের প্রতিশ্রুত তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা রাখতে নানান তালবাহানা দেখায় নুরুন্নাহার।

    ঘটনার দিন নুরনাহারের বেডরুমে দীর্ঘক্ষণের আলোচনায় ব্যর্থ হওয়া হতাশাগ্রস্ত আলতাফ ক্ষুদ্ধ মানসিকতায় ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়ের চেষ্টা করলে, নূরনাহার আলতাফকে শায়েস্তা করতে প্রতিবেশী ও পুলিশের ভয় দেখায়। তাৎক্ষণিক মেজাজ হারিয়ে আলতাফ সাথে থাকা ছুরি দিয়ে নুরনাহার কে জখম করে। আহত নুর নাহার দৌড়ে ভবনের দ্বিতীয় তলায় মেয়ের বেডরুমে ঢুকে পড়ে। আলতাফ পেছন থেকে দৌড়ে গিয়ে মেয়ের বেডরুমে নুরুন্নাহারের গলায় ছুরি চালায়। মায়ের আত্মচিৎকারে ঘুমন্ত প্রিয়ন্তী জেগে ওঠে। ততক্ষণে মায়ের গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করে দিয়েছে পাষণ্ড আলতাফ।

    ঘটনার সাক্ষী একমাত্র মেয়ে হত্যাকান্ড দেখে ফেলায় প্রিয়ন্তীকে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে যখম করে খুনি আলতাফ। হাত ফসকে আহত প্রিয়ন্তী দৌড়ে নেমে ভাড়াটিয়ার দরজায় কড়া নাড়ে বাঁচার আকুতি নিয়ে। ভাড়াটিয়ারা দরজা খোলা মাত্র প্রিয়ন্তী লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। শোর চিৎকারে লোকজন এগিয়ে এলে রক্তমাখা শরীর নিয়ে পালানোর চেষ্টা করে পাষণ্ড খুনি আলতাফ হোসেন।

    সহজেই অনুমেয় রক্ত রঞ্জিত হাতে খুনি আলতাফকে পথচারী জনতা ও স্থানীয় প্রতিবেশীদের সহায়তায় আটক করে বেঁধে রেখে পুলিশে খবর দেয় প্রতিবেশীরা।
    ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান নুর নাহার, প্রতিবেশীদের সহায়তায় গুরুতর আহত প্রিয়ন্তীকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় সে, তারপরেও নোয়াখালী সদর জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

    ঘটনাস্থলে এসে অবস্থান নেয় পুলিশ। আটক হয় খুনি আলতাফ। দিনভর তদন্ত ও দফায় দফায় আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেলে নোয়াখালী সুধারাম মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম এ সব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান শীঘ্রই তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

    আরও খবর

                       

    জনপ্রিয় সংবাদ