ঢাকা ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ ::

সংরক্ষিত পুরাকীর্তি তাড়াশ ভবন | বাংলাদেশের বার্তা 

বাংলাদেশের বার্তা
  • আপডেট সময় : ০২:২৪:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩
  • / ৯৬২৮ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আবু সুফিয়ান :

ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত তাড়াশ উপজেলার প্রায় ১৬ কি.মি. দক্ষিণ পূর্ব দেবচারিয়া গ্রামে বাসুদেব ওরফে নারায়ণদেব চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বাস করতেন।

তিনি নবাব ইসলাম খাঁ এর অধীনে কাজ করতেন। তৎকালীন সময়ে নবাব তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে চৌধুরীই তাড়াশ অঞ্চল তাকে জায়গীর দান করেন। তৎকালে”পরগণা কাঁটার মহল্লা” হতে দুইশত মৌজা নিয়ে এই চৌধুরীরাই তাড়াশ জমিদারী সৃষ্টি করে।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে নারায়ণদেব চৌধুরীর বংশধর বনমালী রায়কে জনহিতকর কাজ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করেন। তিনিই পাবনা জেলার সদর উপজেলার গোপালপুর মৌজায় তাড়াশ ভবনটি নির্মাণ করেন।

জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নান্দনিক সৌন্দর্য আর স্থাপত্যর অনন্য নিদর্শন। এ ভবনটি তাড়াশের রাজবাড়ী নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ শাসনামলে ইন্দো- ইউরোপিয় রীতিতে নির্মিত জমিদার বাড়িটি আজও দাঁড়িয়ে আছে ‌‌”রায় বাহাদুরের প্রতীক”হয়ে। তাড়াশ রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন তাড়াশের তৎকালীন বনমালী রায় এবং ১৮শ শতকের কোন এক সময় ভবনটি নির্মিত হয়।

পূর্বমুখী দ্বিতলা ভবনটি ১.৫৯৭৫ একর ভূমির উপর নির্মিত। যার চারটি রোমান করিনথিয় স্তম্ভের উপরে আকর্ষণীয় দ্বিতল গাড়ি বারান্দা প্রাচীন কীর্তির সাক্ষ্য বহন করে। নির্মিত প্রাসাদের চারদিকে সীমানা প্রাচীর এবং সম্মূখের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের শেষ প্রান্তের প্রধান প্রবেশ ফটকটি অবস্থিত।

ফটকটির দু পার্শ্বে দুটি করে চারটি স্তম্ভ এবং নরমান থামের শিরাবহরকের মাঝখানে বিশাল আকৃতির অরধাবৃত্তাকার খিলান রয়েছে। এই প্রবেশ পথ হতে মূল ভবনটি ৩৫ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত। দ্বিতল বিশিষ্ট তাড়াশ ভবনের বাহিরের পরিমাপ উত্তর-দক্ষিণে ত্রিশ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ষোল মিটার।

ভবনটি ৫১ সেন্টিমিটার প্রশস্ত ইটের দেওয়াল দ্বারা নির্মিত। অপরূপ কারুকাজ সমৃদ্ধ এই জমিদার বাড়িটির নিচতলায় ৮টি কক্ষ বিদ্যমান। এর মধ্যে নিচতলার কেন্দ্রীয় কক্ষটির ছাদে পিতলের পাতে বিশেষ ভাবে জ্যামিতিক বর্গ ফুলের ডগা অত্যান্ত আকর্ষণীয়।

ভবনটির ছাদে লোহার বিম ও বর্গার উপর টালি দ্বারা নির্মিত। প্রাচীন এই ভবনটিতে মোট ৮০টি জানালা রয়েছে;যেগুলো দুই স্তর বিশিষ্ট ১টি কাঠের এবং অপর টি কাঁচের তৈরি। ভবনটিতে ৫৩টি জানালা রয়েছে যেগুলোতে খড়খড়ি বা খড়াবৎ ব্যবহার করা হয়েছে।

গাড়ি বারান্দায় ব্যবহৃত গোলাকার স্তম্ভসমূহতে সাসানিক থামের পাদপট্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং অন্যান্য পিলার গুলো নরমান থামের শিরাবর কে সজ্জিত নিচতলা হতে উপরে ওঠার জন্য ভবনের উত্তর দিকে একটি কাঠের সিঁড়ি রয়েছে।

তাড়াশ ভবনের প্রত্নতাত্তিক গুরুত্ব বিবেচনা করে গণপ্রজাতন্ত্রীক বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমান তাড়াশ ভবন প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর , সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত।

http://এইচ/কে

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

সংরক্ষিত পুরাকীর্তি তাড়াশ ভবন | বাংলাদেশের বার্তা 

আপডেট সময় : ০২:২৪:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৩

আবু সুফিয়ান :

ষোড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে সিরাজগঞ্জ জেলার অন্তর্গত তাড়াশ উপজেলার প্রায় ১৬ কি.মি. দক্ষিণ পূর্ব দেবচারিয়া গ্রামে বাসুদেব ওরফে নারায়ণদেব চৌধুরী নামে এক ব্যক্তি বাস করতেন।

তিনি নবাব ইসলাম খাঁ এর অধীনে কাজ করতেন। তৎকালীন সময়ে নবাব তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে চৌধুরীই তাড়াশ অঞ্চল তাকে জায়গীর দান করেন। তৎকালে”পরগণা কাঁটার মহল্লা” হতে দুইশত মৌজা নিয়ে এই চৌধুরীরাই তাড়াশ জমিদারী সৃষ্টি করে।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে নারায়ণদেব চৌধুরীর বংশধর বনমালী রায়কে জনহিতকর কাজ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার রায় বাহাদুর উপাধি প্রদান করেন। তিনিই পাবনা জেলার সদর উপজেলার গোপালপুর মৌজায় তাড়াশ ভবনটি নির্মাণ করেন।

জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে নান্দনিক সৌন্দর্য আর স্থাপত্যর অনন্য নিদর্শন। এ ভবনটি তাড়াশের রাজবাড়ী নামেও পরিচিত। ব্রিটিশ শাসনামলে ইন্দো- ইউরোপিয় রীতিতে নির্মিত জমিদার বাড়িটি আজও দাঁড়িয়ে আছে ‌‌”রায় বাহাদুরের প্রতীক”হয়ে। তাড়াশ রাজবাড়ীটি নির্মাণ করেন তাড়াশের তৎকালীন বনমালী রায় এবং ১৮শ শতকের কোন এক সময় ভবনটি নির্মিত হয়।

পূর্বমুখী দ্বিতলা ভবনটি ১.৫৯৭৫ একর ভূমির উপর নির্মিত। যার চারটি রোমান করিনথিয় স্তম্ভের উপরে আকর্ষণীয় দ্বিতল গাড়ি বারান্দা প্রাচীন কীর্তির সাক্ষ্য বহন করে। নির্মিত প্রাসাদের চারদিকে সীমানা প্রাচীর এবং সম্মূখের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণের শেষ প্রান্তের প্রধান প্রবেশ ফটকটি অবস্থিত।

ফটকটির দু পার্শ্বে দুটি করে চারটি স্তম্ভ এবং নরমান থামের শিরাবহরকের মাঝখানে বিশাল আকৃতির অরধাবৃত্তাকার খিলান রয়েছে। এই প্রবেশ পথ হতে মূল ভবনটি ৩৫ মিটার পশ্চিমে অবস্থিত। দ্বিতল বিশিষ্ট তাড়াশ ভবনের বাহিরের পরিমাপ উত্তর-দক্ষিণে ত্রিশ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ষোল মিটার।

ভবনটি ৫১ সেন্টিমিটার প্রশস্ত ইটের দেওয়াল দ্বারা নির্মিত। অপরূপ কারুকাজ সমৃদ্ধ এই জমিদার বাড়িটির নিচতলায় ৮টি কক্ষ বিদ্যমান। এর মধ্যে নিচতলার কেন্দ্রীয় কক্ষটির ছাদে পিতলের পাতে বিশেষ ভাবে জ্যামিতিক বর্গ ফুলের ডগা অত্যান্ত আকর্ষণীয়।

ভবনটির ছাদে লোহার বিম ও বর্গার উপর টালি দ্বারা নির্মিত। প্রাচীন এই ভবনটিতে মোট ৮০টি জানালা রয়েছে;যেগুলো দুই স্তর বিশিষ্ট ১টি কাঠের এবং অপর টি কাঁচের তৈরি। ভবনটিতে ৫৩টি জানালা রয়েছে যেগুলোতে খড়খড়ি বা খড়াবৎ ব্যবহার করা হয়েছে।

গাড়ি বারান্দায় ব্যবহৃত গোলাকার স্তম্ভসমূহতে সাসানিক থামের পাদপট্র ব্যবহার করা হয়েছে এবং অন্যান্য পিলার গুলো নরমান থামের শিরাবর কে সজ্জিত নিচতলা হতে উপরে ওঠার জন্য ভবনের উত্তর দিকে একটি কাঠের সিঁড়ি রয়েছে।

তাড়াশ ভবনের প্রত্নতাত্তিক গুরুত্ব বিবেচনা করে গণপ্রজাতন্ত্রীক বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ জানুয়ারি ১৯৯৮ সালে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমান তাড়াশ ভবন প্রত্নতত্ত অধিদপ্তর , সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্বারা পরিচালিত।

http://এইচ/কে