ঢাকা ০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজ ::

” হে প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব “সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শেখ মারুফা নাবিলা

বাংলাদেশের বার্তা
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৪:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩
  • / ৯৬২৩ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

হে জাতির জনক!

প্রতিবার তোমায় নিয়ে কিছু লিখতে গেলেই থেমে যায় আমার হাত। মস্তিষ্ক এত দ্রুত কাজ করা শুরু করে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে হৃদ-স্পন্দন। থেমে যাই আমি।

প্রথম কবে আমি তোমায় জেনেছিলাম জানি না। তোমার সাথে যে আজন্ম পরিচয়। শৈশবে আব্বার সাথে যেতাম ১৫ আগস্ট এর অনুষ্ঠানে। তখন বিএনপি’র শাসনকাল। খুব ছোট একটা ঘর তোমার ছবি আর ব্যানার দিয়ে ভর্তি। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম আর পড়তাম সব কিছু। তখনো জানতাম না আসলে কি হয়েছিল ১৫ আগস্ট।

তারপর ধীরে ধীরে জানতে শুরু করলাম তোমায়।পত্রিকা, বই কিংবা রেডিও -টিভিতে তোমায় নিয়ে করা সব প্রোগ্রাম গোগ্রাসে গিলতাম। ভালবাসা তোমার প্রতি তীব্র হতে থাকলো।

জানলাম কিভাবে তুমি খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলে। অবাক হতাম সেসব ইতিহাস জেনে। একজন মানুষ কিভাবে পারে নিজের মা এবং মাটিকে এত ভালবাসতে ,তা তোমায় না জানলে কোনদিন বুঝতে পারতাম না। শোষিত, নিরীহ বাঙালির চোখের মণি তুমি। তুমি তাদের মুজিব ভাই। আহ! কত দরদ এই ডাকে। কত ভরসা তারা করে তাদের মুজিব ভাই কে। এই বাঙালি জানে একমাত্র মুজিব ভাই পারবে পাকি রাক্ষসদের থাবা থেকে বাংলাকে রক্ষা করতে। প্রতিটা আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রপথিক মুজিব ভাই। আপোষহীন,নির্লোভ এক ব্যক্তি; যিনি অন্যায়ের কাছে কোনদিন মাথা নত করতে জানেন না। যিনি জানেন কিভাবে নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে হয়। নিজের জন্য কোনদিন যিনি ভাবেন নি। যার একটাই উদ্দেশ্য “বাঙালি জাতির মুক্তি “।

১৯৭১ সালের ৭মার্চ যার একটি তর্জনীর নির্দেশে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি গর্জে উঠলো স্বাধীনতার সংগ্রামে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল ঝাঁপিয়ে পড়লো মুক্তির নেশায়। ২৫মার্চ কালরাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে দিয়ে গেলেন স্বাধীনতার ঘোষণা। ঘরে ঘরে দূর্গ করে তুলল বাঙ্গালিরা। পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করতে লাগলো এই জনপদে। আর কিছু কুকুর চাটতে লাগলো তাদের পা। নিরীহ বাঙালি হয়ে গেল মুজিবের ডাকে সংগ্রামী। অস্ত্র হাতে তুলে নিল দেশ স্বাধীন করতে। কে নেই সে দলে; আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা ঝাঁপিয়ে পড়লো জয় বাংলা বলে। বিশ্ব একদিকে দেখলো ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় আর একদিকে দেখলো বাঙালির অসম সাহস। ৯মাস পর উদিত হল নতুন সূর্য। ফুটে উঠল বিজয়ের আলো। পৃথিবীর বুকে নতুন এক মানচিত্র জেগে উঠলো। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। তুমি হলে বাঙালি জাতির পিতা।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক দেশ গড়ার ভার নিলে তুলে নিজের কাঁধে। মাত্র তিন মাসে মিত্রবাহিনীকে ফেরত পাঠায়ি বিশ্বকে দেখিয়ে দিলে বাঙালি জাতি আজ সার্বভৌম। শুরু হল তোমার দেশ গড়ার কার্যক্রম। অতিদ্রুত গতিতে সোনার বাংলা গড়ে উঠতে শুরু করলো নতুন ভাবে। বিশ্বে নতুন করে প্রকাশ করল নিজের পরিচয়।

তারপর একদিন আমি জানতে পারলাম কি ঘটেছিল ১৫আগস্ট ১৯৭৫ এ। আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস করতে পারি নি। কি নির্মম! কি নিষ্ঠুর! সপরিবারে হত্যা করা হলো তোমায়। তোমার দুই কন্যা বেঁচে গেলেন আল্লাহ্‌র রহমতে। ১৫আগস্ট বাঙালির ইতিহাসে কাল একটি অধ্যায়। একটি জাতি মেরে ফেললো তাদের জাতির পিতাকে। নাহ! আমি আর পারছিনা এসব নিয়ে লিখতে। এখনো বিশ্বাস করতে পারি না তুমি নেই।
মাঝে মাঝে ভাবি একটা টাইমমেশিন পেলে ফিরে যাব সেই ‘৭৫ এ শুধু তোমায় রক্ষা করতে। নিজের হাতে প্রতিহত করবো কুকুরগুলোকে যারা তোমায় হত্যা করতে এসেছিল।

তোমার দেহে ২৮টি বুলেট, ব্রাশফায়ারে এফোঁড়ওফোঁড় তোমার দেহ। রক্তে ভেসে যাওয়া ধানমণ্ডি ৩২। বঙ্গমাতাও বরণ করে নিলেন সহমরণ। শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং তাদের স্ত্রীদের ও হত্যা করা হল তোমার সাথে। তোমার ছেলে ছোট্ট রাসেল তাকেও ছাড়ে নি জানোয়ার গুলো। কি নিষ্পাপ মুখ তার!

আমরা কি অধমের জাতি! আমাদের হাতে এখনো লেগে আছে তোমার তাজা রক্ত। হে পিতা! ক্ষমা কর তোমার সন্তানদের। ক্ষমা কর! তুমি এবং সেই রাতে নিহত ১৮জন্য সদস্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ্‌ তোমাদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। শ্রদ্ধায় স্মরি তোমায় জাতির পিতা!

সেদিন ঘাতকের বুলেট তোমায় হত্যা করেছিল কিন্তু হত্যা করতে পারে নি তোমার আদর্শ, তোমার দর্শনকে।আজও এই জাতি বুকে ধারণ করে তোমায়। তুমি আছো এই বাংলায় সদা ভাস্বর!

তুমি ভেবো না পিতা। তোমার কন্যার যোগ্য নেতৃত্বে গড়ে উঠছে তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা। তুমি শুধু আমাদের ক্ষমা কর হে মুজিব! হে বঙ্গবন্ধু! শুধু একটা কথাই বার বার মনে পড়ে, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই।

শেখ মারুফা নাবিলা
সহকারী অধ্যাপক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
ট্যাগস :

” হে প্রিয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব “সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী শেখ মারুফা নাবিলা

আপডেট সময় : ০৭:৫৪:২৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৩

হে জাতির জনক!

প্রতিবার তোমায় নিয়ে কিছু লিখতে গেলেই থেমে যায় আমার হাত। মস্তিষ্ক এত দ্রুত কাজ করা শুরু করে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ে হৃদ-স্পন্দন। থেমে যাই আমি।

প্রথম কবে আমি তোমায় জেনেছিলাম জানি না। তোমার সাথে যে আজন্ম পরিচয়। শৈশবে আব্বার সাথে যেতাম ১৫ আগস্ট এর অনুষ্ঠানে। তখন বিএনপি’র শাসনকাল। খুব ছোট একটা ঘর তোমার ছবি আর ব্যানার দিয়ে ভর্তি। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতাম আর পড়তাম সব কিছু। তখনো জানতাম না আসলে কি হয়েছিল ১৫ আগস্ট।

তারপর ধীরে ধীরে জানতে শুরু করলাম তোমায়।পত্রিকা, বই কিংবা রেডিও -টিভিতে তোমায় নিয়ে করা সব প্রোগ্রাম গোগ্রাসে গিলতাম। ভালবাসা তোমার প্রতি তীব্র হতে থাকলো।

জানলাম কিভাবে তুমি খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলে। অবাক হতাম সেসব ইতিহাস জেনে। একজন মানুষ কিভাবে পারে নিজের মা এবং মাটিকে এত ভালবাসতে ,তা তোমায় না জানলে কোনদিন বুঝতে পারতাম না। শোষিত, নিরীহ বাঙালির চোখের মণি তুমি। তুমি তাদের মুজিব ভাই। আহ! কত দরদ এই ডাকে। কত ভরসা তারা করে তাদের মুজিব ভাই কে। এই বাঙালি জানে একমাত্র মুজিব ভাই পারবে পাকি রাক্ষসদের থাবা থেকে বাংলাকে রক্ষা করতে। প্রতিটা আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রপথিক মুজিব ভাই। আপোষহীন,নির্লোভ এক ব্যক্তি; যিনি অন্যায়ের কাছে কোনদিন মাথা নত করতে জানেন না। যিনি জানেন কিভাবে নিজেদের ন্যায্য অধিকার আদায় করতে হয়। নিজের জন্য কোনদিন যিনি ভাবেন নি। যার একটাই উদ্দেশ্য “বাঙালি জাতির মুক্তি “।

১৯৭১ সালের ৭মার্চ যার একটি তর্জনীর নির্দেশে সাড়ে সাত কোটি বাঙালি গর্জে উঠলো স্বাধীনতার সংগ্রামে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল ঝাঁপিয়ে পড়লো মুক্তির নেশায়। ২৫মার্চ কালরাতে গ্রেফতার হওয়ার আগে দিয়ে গেলেন স্বাধীনতার ঘোষণা। ঘরে ঘরে দূর্গ করে তুলল বাঙ্গালিরা। পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করতে লাগলো এই জনপদে। আর কিছু কুকুর চাটতে লাগলো তাদের পা। নিরীহ বাঙালি হয়ে গেল মুজিবের ডাকে সংগ্রামী। অস্ত্র হাতে তুলে নিল দেশ স্বাধীন করতে। কে নেই সে দলে; আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা ঝাঁপিয়ে পড়লো জয় বাংলা বলে। বিশ্ব একদিকে দেখলো ইতিহাসের নির্মম অধ্যায় আর একদিকে দেখলো বাঙালির অসম সাহস। ৯মাস পর উদিত হল নতুন সূর্য। ফুটে উঠল বিজয়ের আলো। পৃথিবীর বুকে নতুন এক মানচিত্র জেগে উঠলো। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। তুমি হলে বাঙালি জাতির পিতা।

যুদ্ধ বিধ্বস্ত এক দেশ গড়ার ভার নিলে তুলে নিজের কাঁধে। মাত্র তিন মাসে মিত্রবাহিনীকে ফেরত পাঠায়ি বিশ্বকে দেখিয়ে দিলে বাঙালি জাতি আজ সার্বভৌম। শুরু হল তোমার দেশ গড়ার কার্যক্রম। অতিদ্রুত গতিতে সোনার বাংলা গড়ে উঠতে শুরু করলো নতুন ভাবে। বিশ্বে নতুন করে প্রকাশ করল নিজের পরিচয়।

তারপর একদিন আমি জানতে পারলাম কি ঘটেছিল ১৫আগস্ট ১৯৭৫ এ। আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। বিশ্বাস করতে পারি নি। কি নির্মম! কি নিষ্ঠুর! সপরিবারে হত্যা করা হলো তোমায়। তোমার দুই কন্যা বেঁচে গেলেন আল্লাহ্‌র রহমতে। ১৫আগস্ট বাঙালির ইতিহাসে কাল একটি অধ্যায়। একটি জাতি মেরে ফেললো তাদের জাতির পিতাকে। নাহ! আমি আর পারছিনা এসব নিয়ে লিখতে। এখনো বিশ্বাস করতে পারি না তুমি নেই।
মাঝে মাঝে ভাবি একটা টাইমমেশিন পেলে ফিরে যাব সেই ‘৭৫ এ শুধু তোমায় রক্ষা করতে। নিজের হাতে প্রতিহত করবো কুকুরগুলোকে যারা তোমায় হত্যা করতে এসেছিল।

তোমার দেহে ২৮টি বুলেট, ব্রাশফায়ারে এফোঁড়ওফোঁড় তোমার দেহ। রক্তে ভেসে যাওয়া ধানমণ্ডি ৩২। বঙ্গমাতাও বরণ করে নিলেন সহমরণ। শেখ কামাল, শেখ জামাল এবং তাদের স্ত্রীদের ও হত্যা করা হল তোমার সাথে। তোমার ছেলে ছোট্ট রাসেল তাকেও ছাড়ে নি জানোয়ার গুলো। কি নিষ্পাপ মুখ তার!

আমরা কি অধমের জাতি! আমাদের হাতে এখনো লেগে আছে তোমার তাজা রক্ত। হে পিতা! ক্ষমা কর তোমার সন্তানদের। ক্ষমা কর! তুমি এবং সেই রাতে নিহত ১৮জন্য সদস্যের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ্‌ তোমাদের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করুন। শ্রদ্ধায় স্মরি তোমায় জাতির পিতা!

সেদিন ঘাতকের বুলেট তোমায় হত্যা করেছিল কিন্তু হত্যা করতে পারে নি তোমার আদর্শ, তোমার দর্শনকে।আজও এই জাতি বুকে ধারণ করে তোমায়। তুমি আছো এই বাংলায় সদা ভাস্বর!

তুমি ভেবো না পিতা। তোমার কন্যার যোগ্য নেতৃত্বে গড়ে উঠছে তোমার স্বপ্নের সোনার বাংলা। তুমি শুধু আমাদের ক্ষমা কর হে মুজিব! হে বঙ্গবন্ধু! শুধু একটা কথাই বার বার মনে পড়ে, যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই।

শেখ মারুফা নাবিলা
সহকারী অধ্যাপক, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল। ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।