আজ বিশ্ব সাদাছড়ি দিবস

- আপডেট সময় : ০৩:৫২:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২২
- / ৯৬৪৬ বার পড়া হয়েছে
আমরা ও জ্বালাবো আলোর প্রদীপ, ছড়াবো আলোর রশ্মী-হয়ে উঠুক প্রতিটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শ্লোগান।
কেউ বা জন্মগত ভাবেই চোখে দেখেন না, আবার কেউ বা জন্মের পর নানান দুর্ঘটনায় হারিয়েছেন দৃষ্টিশক্তি। তবে দৃষ্টিশক্তি না থাকলেই তিনি সমাজের বোঝা নন। তারাও নিজেরা নিজের অবস্থান তৈরি করতে পারেন সমাজে।তারাও সমাজের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারেন।এসব ব্যক্তি যখন নিজের চেষ্টায় উচ্চ পর্যায়ে উঠে আসেন তখন তারা হন দেশের সম্পদ ও গর্ব। সাহসী, মেধাবী ও পরিশ্রমী এসব ব্যক্তি হয়ে উঠে মানুষের অনুপ্রেরণা।
বিশ্ব সাদাছড়ি দিবসের তাৎপর্য হলো অন্ধদেরকে পথ চলায় উৎসাহ প্রদান।এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘দৃষ্টিজয়ে ব্যবহার করি, প্রযুক্তিনির্ভর সাদাছড়ি’। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর অধিকার নিয়ে কাজ করে বিশ্বের এমন বিভিন্ন সংস্থা নানা আয়োজনে দিবসটি পালন করছে। ১৯৬৪ সাল থেকে প্রতিবছরের ১৫ অক্টোবর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। প্রতি বছর এ দিনটিতে সরকারি উদ্যোগে দেশে শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা, এবং দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থীদের এ দিবস উপলক্ষে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধ্যয়নরত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের এককালীন অনুদান প্রদানসহ সারা দেশে ৬৪ জেলায় আলোচনাসভা ও স্মার্ট সাদাছড়ি বিতরণ করা হয়ে থাকে।
লায়নস ইন্টারন্যাশনালের হিসাবমতে, বিশ্বে ২৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ পুরোপুরি ও আংশিকভাবে চোখে দেখে না। এসব দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ চলাচলের জন্য হাতে সাদাছড়ি ব্যবহার করে থাকে, যাতে যারা চোখে দেখে তারা তাদের চলাচলে সহযোগিতা করে। নিরাপদে সড়কে ও অন্যান্য স্থানে চলাচলের সুযোগ করে দেয়।
দেশে বর্তমানে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য তিন ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। যথা—একীভূত শিক্ষাব্যবস্থা, বিশেষায়িত শিক্ষাব্যবস্থা এবং সমন্বিত শিক্ষাব্যবস্থা। দেশে প্রথম ১৯৭৪ সালে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়।অন্ধদের শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজন বিশেষ শিক্ষাব্যবস্থা। যা সম্ভব ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে।
বর্তমানে ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করে অন্ধদের শিক্ষা দেওয়া হয়।এর আবিষ্কারক নিজেও চোখে দেখতে পেতেন না। তাই তো দৃষ্টিহীনরা যাতে পড়াশোনা চালিয়ে সমাজের স্রোতে ফিরে আসতে পারেন সেই চেষ্টাই করছিলেন। লুই ব্রেইল ছিলেন সেই প্রদীপ। যার হাত ধরেই আজ দৃষ্টিহীন মানুষেরা আলো দেখতে পেয়েছেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা। এর মধ্যে একটি হলো”ব্র্যাক”।এখন থেকে কারো সাহায্য ছাড়াই ব্র্যাকের ওয়েবসাইটে থাকা সব তথ্য জানতে পারবেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা।এই ওয়েবসাইটই ব্রেইল কি-বোর্ড সমর্থন করে। এটি হওয়া উচিত প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে,প্রত্যেকটি সংস্থায়।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হস্তলিখিত ব্রেইল থেকে বাংলা টেক্সট–এ রূপান্তর করার একটি সফটওয়্যার প্রোটোটাইপ উপস্থাপন ও উদ্বোধন করা হয়েছে।হস্তলিখিত ব্রেইল থেকে টেক্সটে কনভার্ট করার সিস্টেমে সফটওয়্যারটি কাজ করবে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-লামিয়া আর্জুমান্দ বলেন প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল পদ্ধতিতে পাঠদানের ব্যাবস্থা করা উচিত,যাতে করে তারা ও আমাদের পাশে বসে পড়ার সুযোগ পায়।
দেশে ৬৪টি জেলায় মোট ৬৪০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশু সম্পূর্ণ সরকারি খরচে সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় পড়াশোনা করছে।দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য এসব বিশেষায়িত বিদ্যালয়ে প্রায় ২৫০ জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল।