ঢাকা ০৭:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার খাল ও নদী দ্রুত পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

বাংলাদেশের বার্তা
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৭:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৯৬১৫ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নিউজ ডেস্ক। 

ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার সব খালের পাশাপাশি চার নদী দ্রুত পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর খালগুলোর পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী সংস্কার ও দূষণ রোধের জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, দেশকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এর অংশ হিসেবে এগুলোকে ঘিরে চিহ্নিত সাতটি ‘হটস্পটে’ অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেন। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য স্থানেও এ হটস্পট কৌশল বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা ও দূষণ রোধে প্রণয়ন করা মহাপরিকল্পনার আলোকে তৈরি জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এসব নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছে বাসস।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কারিগরি ও সমন্বয় কমিটি গঠনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ভিত্তিক একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমকে উদ্ধৃত করে বাসস জানায়।

তিনি জানান, একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্তও দিয়েছেন। বৈঠকে ঢাকা ও আশপাশের নদী ও খাল পুনরুদ্ধারের জন্য সাতটি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়। সেগুলো হলো- গাজীপুর, গড়ানচটবাড়ি, সাভার, পূর্বাচল, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচর।

বৈঠকে মহাপরিকল্পনার আলোকে তৈরি জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।

এর আগে সভায় সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা নদী দূষণ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে। আমাদের বাংলাদেশের বেঁচে থাকাও এই নদীর ওপর নির্ভর করে।

বিগত বছরগুলোতে নদী দূষণ, দখল বন্ধ ও নাব্য পুনরুদ্ধারে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর তারা সব সময় নদীগুলোকে রক্ষা ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।

অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা নিচু উচ্চতার সেতু নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সেতুগুলো মানুষের জন্য উপকারী হলেও নির্মাণের সময় নৌযান চলাচলের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। এবং সে কারণেই নৌ চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সেতুগুলো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় আসার পর সরকারের লক্ষ্য ছিল নদী রক্ষা, নাব্যতা বজায় রাখা এবং দূষণ থেকে রক্ষা করা। সরকারের প্রথম মেয়াদে নদী ড্রেজিং শুরু হয়েছিল এবং জমি পুনরুদ্ধারের জন্য পলিমাটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের ড্রেজিং করতে হবে এবং নাব্যতা বজায় রাখতে হবে। নদী ভাঙন রোধকল্পে আমাদের ড্রেজিং করতে হবে।”

সরকারপ্রধান বলেন, এক সময় নদী শাসনের নামে উর্বর ফসলি জমিতে বেড়িবাঁধ তৈরি করা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল।

নদীর ধারে যেসব শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে সেগুলোর বর্জ্য সাধারণত নদীতে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সুয়ারেজ লাইনের সমস্ত বর্জ্যও নদীতে যায়, যার ফলে দূষণ বাড়ছে। আমরা যাই করি না কেন, প্রথমেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।”

দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে দুর্গন্ধ আসা খুবই বেদনাদায়ক মন্তব্য করে তিনি রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে বাঁচাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের পরামর্শ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নদী শাসনের জন্য নদীর গভীরতার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে এবং আমাদের অবশ্যই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের লক্ষে নদীর পাশাপাশি একটি বাফার জোন তৈরি করতে হবে।

পরিবেশ সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপরও জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সবাইকে সব নগরীর জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছি। আমরা যে পরিকল্পনাই গ্রহণ করি না কেন সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পানির প্রবাহ সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে। এটা খুবই দুঃখজনক যে অতীতে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিকল্পিতভাবে হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তান আমলে এটি ঘটেনি এবং এমনকি ১৯৭৫ সালের পর অবৈধ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী যারা অস্ত্র নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল তারাও দেশের সামগ্রিক সমন্বিত ও পরিকল্পিত উন্নয়নে মনোযোগ দেয়নি।”

তিনি বলেন, ফলে পরিবেশগত সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়েছে এবং নদীগুলোও দখল করা হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

ঢাকার খাল ও নদী দ্রুত পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

আপডেট সময় : ০৩:৫৭:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৩

নিউজ ডেস্ক। 

ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার সব খালের পাশাপাশি চার নদী দ্রুত পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

রাজধানীর খালগুলোর পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদী সংস্কার ও দূষণ রোধের জন্যও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, দেশকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এর অংশ হিসেবে এগুলোকে ঘিরে চিহ্নিত সাতটি ‘হটস্পটে’ অগ্রাধিকারভিত্তিতে সমন্বিত প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দেন। পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য স্থানেও এ হটস্পট কৌশল বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন তিনি।

সোমবার (০৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষা ও দূষণ রোধে প্রণয়ন করা মহাপরিকল্পনার আলোকে তৈরি জরিপ প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এসব নির্দেশনা দেন বলে জানিয়েছে বাসস।

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি কারিগরি ও সমন্বয় কমিটি গঠনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ভিত্তিক একটি বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের আরেকটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমকে উদ্ধৃত করে বাসস জানায়।

তিনি জানান, একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্তও দিয়েছেন। বৈঠকে ঢাকা ও আশপাশের নদী ও খাল পুনরুদ্ধারের জন্য সাতটি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়। সেগুলো হলো- গাজীপুর, গড়ানচটবাড়ি, সাভার, পূর্বাচল, কল্যাণপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কামরাঙ্গীরচর।

বৈঠকে মহাপরিকল্পনার আলোকে তৈরি জরিপ প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া।

এর আগে সভায় সূচনা বক্তব্যে শেখ হাসিনা নদী দূষণ বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলেন, দেশকে বাঁচাতে হলে নদী বাঁচাতে হবে। আমাদের বাংলাদেশের বেঁচে থাকাও এই নদীর ওপর নির্ভর করে।

বিগত বছরগুলোতে নদী দূষণ, দখল বন্ধ ও নাব্য পুনরুদ্ধারে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ক্ষমতায় আসার পর তারা সব সময় নদীগুলোকে রক্ষা ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন।

অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা নিচু উচ্চতার সেতু নৌযান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই সেতুগুলো মানুষের জন্য উপকারী হলেও নির্মাণের সময় নৌযান চলাচলের বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি। এবং সে কারণেই নৌ চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে এবং এই সেতুগুলো বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ক্ষমতায় আসার পর সরকারের লক্ষ্য ছিল নদী রক্ষা, নাব্যতা বজায় রাখা এবং দূষণ থেকে রক্ষা করা। সরকারের প্রথম মেয়াদে নদী ড্রেজিং শুরু হয়েছিল এবং জমি পুনরুদ্ধারের জন্য পলিমাটি ব্যবহার করা হয়েছিল।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের ড্রেজিং করতে হবে এবং নাব্যতা বজায় রাখতে হবে। নদী ভাঙন রোধকল্পে আমাদের ড্রেজিং করতে হবে।”

সরকারপ্রধান বলেন, এক সময় নদী শাসনের নামে উর্বর ফসলি জমিতে বেড়িবাঁধ তৈরি করা স্বাভাবিক ঘটনা ছিল।

নদীর ধারে যেসব শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে সেগুলোর বর্জ্য সাধারণত নদীতে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সুয়ারেজ লাইনের সমস্ত বর্জ্যও নদীতে যায়, যার ফলে দূষণ বাড়ছে। আমরা যাই করি না কেন, প্রথমেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।”

দূষণের কারণে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে দুর্গন্ধ আসা খুবই বেদনাদায়ক মন্তব্য করে তিনি রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে বাঁচাতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের পরামর্শ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নদী শাসনের জন্য নদীর গভীরতার কথা বিবেচনায় রাখতে হবে এবং আমাদের অবশ্যই বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের লক্ষে নদীর পাশাপাশি একটি বাফার জোন তৈরি করতে হবে।

পরিবেশ সংরক্ষণের কথা মাথায় রেখে যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টার ওপরও জোর দেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সবাইকে সব নগরীর জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছি। আমরা যে পরিকল্পনাই গ্রহণ করি না কেন সেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং পানির প্রবাহ সঠিকভাবে বজায় রাখতে হবে। এটা খুবই দুঃখজনক যে অতীতে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি পরিকল্পিতভাবে হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পাকিস্তান আমলে এটি ঘটেনি এবং এমনকি ১৯৭৫ সালের পর অবৈধ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী যারা অস্ত্র নিয়ে সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিল তারাও দেশের সামগ্রিক সমন্বিত ও পরিকল্পিত উন্নয়নে মনোযোগ দেয়নি।”

তিনি বলেন, ফলে পরিবেশগত সমস্যাগুলো উপেক্ষিত হয়েছে এবং নদীগুলোও দখল করা হয়েছে।