নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে কেনা আইসিইউ শয্যা গায়েব
- আপডেট সময় : ০৪:০৩:২৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৯৬৬৬ বার পড়া হয়েছে
পারভেজ মাহমুদ,নোয়াখালী প্রতিনিধি:
মুমূর্ষু রোগীদের নিবিড় পরিচর্যার জন্য ১০টি আইসিইউ শয্যা কেনা হয়। অস্ত্রোপচারের জন্য কেনা হয় ১৩টি অবজারভেশন টেবিল, ফ্রন্ট প্যানেল লাইট ও ফোরডি আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র। কিন্তু পরিদর্শনে এসব চিকিৎসা সারভানের কোনো অস্তিত্ব হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়েছে কিনা তা জানতে স্টক লেজার বই দেখতে চেয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক দল।
কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই লেজার বইও দেখাতে পারেনি। আবার সরঞ্জামগুলো বাতিল ঘোষণা (কনডেমনেশন) করা হয়েছে, এমন তথ্যও নেই। বিস্ময়কর এমন ঘটনা ঘটেছে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালটির জন্য এই কেনাকাটা হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। মালপত্র সরবরাহ করা হয় ২০১৭ সালে। পরবর্তী সময়ে কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা তদন্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতা চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারি অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এই কমিটি সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনে কেনাকাটায় ভয়াবহ অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
দরপত্রে অনিয়ম: দরপত্রে ঋণপত্র (এলসি) খোলার শর্ত থাকলেও এলসি খোলার কোনো প্রমাণপত্র পায়নি তদন্ত কমিটি। এমনকি দরপত্র মূল্যায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মূল্যায়ন কমিটির সদস্য নিমিউ অ্যান্ড টিসির অ্যাসিস্ট্যান্ট রিপেয়ার কাম ট্রেনিং ইঞ্জিনিয়ার এবং গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী (নোয়াখালী) প্রতিনিধির মতামত নেয়া হয়নি। দাখিল করা দরপত্রের বাক্স খুলে মাত্র তিনটি পাওয়া যায়। তিনটি দরপত্রের দুটি একই ব্যক্তির মালিকানাধীন দুই প্রতিষ্ঠানের। প্রতিষ্ঠান দুটি হলো- ‘এক্সয়াল টেকনোলজি বিডি লিমিটেড’ এবং ‘মেসার্স পলাশ চৌধুরী’।
কেনা যন্ত্র ও সরঞ্জাম অদৃশ্য কয়েক কোটি টাকার কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল সরজমিন পরিদর্শনকরেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্তকারী দল। পরিদর্শনকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ক্রয় করা সাউন্ড সিস্টেমের মাউথপিস ও অ্যামপ্লিফায়ার ছাড়া আর কিছুই দেখাতে পারেনি। ফ্রন্ট প্যানেল লাইট, হসপিটাল অটোমেটিক ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। অদৃশ্য ছিল ক্রয় করা ১০টি আইসিইউ শয্যা ১৩টি অবজারভেশনাল টেবিলও। স্পেসিফিকেশন অনুসারে ডেন্টাল চেয়ার, দুটি ফোরডি আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র থাকার কথা থাকলেও সেখানে দুটি টুডি আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হাসপাতাল কর্তৃক ফোরডি আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র দুটি স্পেসিফিকেশন অনুসারে বুঝে নেয়নি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের স্টক লেজার বই না থাকায় মালপত্র গ্রহণ ও বিতরণের বিষয়টি অস্পষ্ট থেকে গেছে। চারটি পণ্যের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া এক্স-রে মেশিনের সিআর অংশ এবং সেল কাউন্টার যন্ত্র অকেজো হওয়ায় সেগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
ক্রয় করা যন্ত্রের মধ্যে পেশেন্ট মনিটর, স্বয়ংক্রিয় রক্তের সেল গণনা যন্ত্র, কার্ডিয়াক মনিটর, কনফারেন্স টেবিল কুশন চেয়ার সেটসহ, ফোরডি আলট্রাসাউন্ড যন্ত্র তিনটি, হাসপাতালের স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার, কনফারেন্স সাউন্ড সিস্টেম ও ৫০০ এমএ এক্স-রে সিএমএসডি থেকে সরবরাহ করা হয়। এগুলোর মূল্য ছিল ২ কোটি ৫৩ লাখ ১ হাজার ২১৬ টাকা। তদন্ত কমিটির দেয়াপ্রতিবেদনটি ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালক নোয়াখালীর কাছে পাঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, তদন্ত কমিটি তার আগের পরিচালক গঠন করেছিলেন। তিনি এসে তদন্ত প্রতিবেদন দুদকে পাঠিয়েছেন।
তবে কমিটির এক সদস্য গণমাধ্যমকে জানান, দুদক বিষয়টি নিয়ে তদন্ত অগ্রবর্তী করছে। ডিসেম্বর মাসেই এ বিষয়ে আলোচনা হবে। তবে প্রাতিষ্ঠানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তিনি পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকেন।
জানা গেছে, পরিদর্শন প্রতিবেদনের বিষয়ে বক্তব্য দিতে গত ২০ নভেম্বর কমিটির সদস্যদের দুদক কার্যালয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে ওই দিন বিকালে চিঠি পান কমিটির সদস্যরা। ফলে সেখানে যাওয়া হয়নি তাদের। এরপর কমিটির সদস্যরা দুদকে যোগাযোগ করলে চলতি মাসে উভয় পক্ষের সুবিধাজনক সময়ে তারিখ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়।
এ বিষয়ে জানতে দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক সুবেল আহমেদের সঙ্গে কথা হয় গণমাধ্যমের। তিনি এখন নোয়াখালীতে কর্মরত না থাকায় বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নন বলে গণমাধ্যমকে জানান। নোয়াখালীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ফারুক হোসেনের ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।