কক্সবাজার নাজিরারটেক শুঁটকি পল্লীতে নির্মাণ হচ্ছে ৬৮টনের কোল্ড স্টোরেজ

- আপডেট সময় : ০৮:৩৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ অগাস্ট ২০২২
- / ৯৬৫৯ বার পড়া হয়েছে
আজিজ উদ্দীন॥
কোস্ট ফাউন্ডেশনের অধীনে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের এর আর্থিক সহায়তায় বাস্তবায়িত কোস্ট ফাউন্ডেশন এর SEP(Sustainable Enterprise Project) প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকি পল্লী নাজিরারটেকের সর্বপ্রথম কোল্ড স্টোরেজ/হিমাগার নির্মাণের জন্য স্বল্প সুদে ও দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধ যোগ্য উদ্যোক্তা পর্যায়ে ৪৭,০০,০০০/-(সাতচল্লিশ লক্ষ টাকা) ঋণ সহায়তা প্রদান করা হয়।
৬৮ টন ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট ২টি হিমাগার নির্মাণের জন্য কক্সবাজারের নাজিরারটেকের বিশিষ্ট শুঁটকি ব্যবসায়ী জনাব আমান উল্লাহকে এই ঋণ সহায়তাটি প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, উদ্যোক্তা পর্যায়ে কোস্ট ফাউন্ডেশনের দেওয়া উক্ত ঋণের পরিমাণ বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা থেকে দেয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অংকের ঋণ সুবিধা।
বর্তমানে উক্ত শুঁটকি পল্লীতে শুঁটকি সংরক্ষনের জন্য কোন হিমাগার/কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা না থাকায় শুঁটকি সংরক্ষণে উৎপাদনকারীরা শুঁটকি দীর্ঘমেয়াদে সংরক্ষণ করতে বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যাদি বা বিষ ব্যবহার করে আসছেন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনের ফলে স্থানীয় পর্যায়ের প্রায় ১৫০-২০০ জন উদ্যোক্তা সরাসরি উপকৃত হবেন।
যারা স্বল্প খরচে খুব সহজেই তাদের উৎপাদিত শুঁটকি সংরক্ষণ করতে পারবেন। যার ফলে শুঁটকি উৎপাদন এলাকা ও ভোক্তা পর্যায়ে নিশ্চিত হবে বিষমুক্ত নিরাপদ শুঁটকির সরবরাহ।
পাশাপাশি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ পরবর্তী সময়ে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ঘটবে।
শুঁটকি বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মৎস্যজাত পণ্য। কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি তৈরী করা হয়। শুঁটকি তৈরীকালে স্বাভাবিকভাবে এতে কিছু আর্দ্রতা বিদ্যমান থাকে যার মাত্রা ১৮-২০%।
আর্দ্রতাযুক্ত এ শুঁটকি দীর্ঘদিন সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজন হিমাগার বা কোল্ড স্টোরেজ ব্যবস্থা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি পল্লী কক্সবাজারের নাজিরারটেক।
এখানেই উৎপাদিত হয় দেশের সর্বোচ্চ পরিমাণ শুঁটকি। উৎপাদন মৌসুমে বিপুল পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হলেও পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের অভাবে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়না।
নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ি বহুমুখি সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আতিক উল্লাহ কোম্পানী কোল্ড স্টোরেজ সম্পর্কে বলেন, আমাদের প্রায় দেড় হাজার মত মৎস্য ব্যবসায়ী আছে। বর্ষা মৌসুম আসলে অথবা আবহাওয়া খারাপ হলে শুটকি মাছ আর কাঁচা মাছ আমাদের সংরক্ষণ করতে হয় কোল্ড স্টোরেজে।
কিন্তু আমাদের এই এলাকাতে কোল্ড স্টোরেজ না থাকার কারণে আমাদের অনেক ক্ষয় ক্ষতি হয় এবং হয়রানীর শিকার হতে হয়। তিনি আরো বলেন, শহরের বিভিন্ন এলাকায় সবে মাত্র ৪/৫টি কোল্ড স্টোরেজ থাকার কারণে, আমরা আমাদের মাছ গুলো ভালো ভাবে মজুদ করতে পারি না।
আমি আমার ব্যক্তিগত, সমিতি ও নাজিরারটেক ব্যবসায়ী ভাইদের পক্ষ থেকে কোস্ট ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাই।
আমাদের জন্য এই মহৎ কাজ করে, ব্যবসা আরো উন্নতি সাধন করার পথ মার্জিত করে দেওয়াই। এখন আমাদের শুটকি ক্ষেত্রে আরো নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। সে সাথে আমান উল্লাহকেও ধন্যবাদ জানান।
দূরবর্তী স্থান ও অধিক মূল্য পরিশোধ জনিত কারণে অনেক উদ্যোক্তাই শুঁটকি সংরক্ষণে হিমাগার ব্যবহার করেননা। একারণে শুধুমাত্র উৎপাদন মৌসুম ছাড়া উদ্যোক্তাগণ সারাবছর ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেননা। যা তাদের আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়।
প্রকল্প কর্ম এলাকার একজন সফল উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী শাহ আমানত ফিশারীজ লিমিটেড এর স্বত্বাধীকারী জনাব মোঃ আমান উল্লাহ সওদাগর, যিনি নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ইতিমধ্যে রোল মডেল।
তিনি জাতীয় মৎস্য পদক ২০২১ অর্জনসহ অন্যান্য অনেক পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন। শুঁটকি খাতে দীর্ঘ ৩০ বছরের সফল ব্যবসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা ও নিরাপদ শুঁটকি সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যাপক বাজার চাহিদার কারণে কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ ও পরিচালনায় আগ্রহী হয়েছেন।
এ কারণেই প্রকল্প সহায়তায় আগ্রহী এ উদ্যোক্তাকে কোস্ট ফাউন্ডেশন কোল্ড স্টোরেজ/হিমাগার স্থাপনের নিমিত্তে ঋণ সহায়তা প্রদানের জন্য নির্বাচিত করা হয়। কোস্ট ফাউন্ডেশন এর কলাতলীস্থ অফিসে উক্ত ঋণ সহায়তার চেক হস্তান্তর করা হয়।
চেক হস্তান্তরকালে উপস্থিত ছিলেন কোস্ট ফাউন্ডেশনের মৌলিক কর্মসূচীর পরিচালক জনাব তারিক সাঈদ হারুন, সহকারী পরিচালক (উদ্যোক্তা উন্নয়ন) বারেকুল ইসলাম চৌধুরী, আঞ্চলিক কর্মসূচী সমন্বয়ক জনাব আশেকুল ইসলাম, সমন্বয়ক তানজিরা খাতুনসহ প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বৃন্দ।