ঢাকা ০৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাড়াশে কিশোরকে খুন করে অটোভ্যান ছিনতাই, খুনি গ্রেফতার

বাংলাদেশের বার্তা
  • আপডেট সময় : ১০:১৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩
  • / ৯৬০৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশের বার্তা অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সাব্বির মির্জা। 

গরীব পরিবারের বড় সন্তান কিশোর ইসমাইল হোসেন (১২) বাবার অটোভ্যানটি নানা বাড়ি থেকে আনতে গিয়েছিল। আর নানা বাড়ি গ্রামের এক ছিনতাইকারীর টার্গেটে পরিণিত হয়ে মাত্র ১২ হাজার টাকার মূল্যের একটি পুরাতন অটোভ্যানের কারণে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহর হাতে খুন হয়েছে শিশু ইসমাইল।

তার বাবা এই শিশুটিকে অটোভ্যানটি আনার জন্য পাঠিয়েছিল।শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ-গুরুদাসপুর আঞ্চলিক সড়কের তাড়াশ অংশের দিঘী সগুনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।কিশোর ইসমাইল নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে। পরিবার ও পুলিশ জানান, ইসমাইলের বাবা আনিছুর রহমান পাশ্ববর্তী শ্রীপুর দিয়ারপাড়া গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে রাতে সেখানে তার সংসার চালানোর একমাত্র পুঁজি অটোভ্যানটি রেখে হেঁটে বাড়িতে আসেন।

পরে শনিবার তিনি তার ছেলে ইসমাইলকে নানা বাড়ি থেকে ওই অটোভ্যানটি আনার জন্য পাঠান। আর ওই গ্রামেরই আমিরুল ইসলামের ছেলে ছিনতাইকারী মো. আব্দুল্লাহ (২২) টার্গেটের শিকার হয় কিশোর ইসমাইল। এ সময় ছিনতাইকারী মো. আব্দুল্লাহ বেশি টাকা ভাড়া দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে ফুঁসলিয়ে রাজি করে তাড়াশের দিকে রওনা হোন।পরে পথিমধ্যে আব্দুল্লাহ তাড়াশ-গুরুদাসপুর আঞ্চলিক সড়কের তাড়াশ অংশের দিঘী সগুনা এলাকায় এসে গরমের কথা বলে বিশ্রামের জন্য সড়কের পাশেই একটি নির্জনস্থানে ইসমাইলকে নিয়ে আসে। আর সেখানে তাঁকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

পাশাপাশি মরদেহটি সড়কের পাশের বোরো জমিতে ফেলে রেখে অটোভ্যানটি নিয়ে তাড়াশের মাধাইনগর ইউনিয়নের কাস্তা বাজারে যান। সেখানে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহ ওই অটোভ্যানটি বিক্রির জন্য স্থানীয় অটোভ্যান চালকদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহ কথা বার্তায় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তখন তারা আব্দুল্লাহকে ধরে ফেলে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিলুর রহমান হাবিলের কাছে নিয়ে যান।

সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহ অটোভ্যানটি ছিনতাই করার কথা স্বীকার করেন। তখন চেয়ারম্যান হাবিব তাড়াশ থানায় পুলিশকে ফোন দেন। কিছুক্ষণ পর তাড়াশ থানার কয়েকজন পুলিশ এসে আব্দুল্লাহসহ অটোভ্যান থানা নিয়ে আসেন। আর থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহ অটোভ্যানটি ছিনতাই ও এর চালক কিশোর ইসমাইলকে শ্বাসরোধ করে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

তখন পুলিশ আব্দুল্লাহকে নিয়ে গিয়ে তাড়াশের দিঘী সগুনা এলাকার একটি বোরো জমির ধানের মধ্যে থেকে কিশোর ইসমাইলের মরদেহটি উদ্ধার করেন। পাশাপাশি মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য শেখ ফজিতুলন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠান।

এ দিকে ইসমাইলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাবা মা ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া ইসমাইলের বাবা আনিছুর রহমান জানান, তিনি ভূমিহীন মানুষ। তার দুটি সন্তান নিয়ে সৎভাবে জীবনযাপন করতে অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

অথচ একজন সৎ পরিশ্রমী অটোভ্যান চালকের ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমি এর বিচার চাই।তাড়াশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, রবিবার বিকালে নিহত ইসমাইলের বাবা আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

তাড়াশে কিশোরকে খুন করে অটোভ্যান ছিনতাই, খুনি গ্রেফতার

আপডেট সময় : ১০:১৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৩

সাব্বির মির্জা। 

গরীব পরিবারের বড় সন্তান কিশোর ইসমাইল হোসেন (১২) বাবার অটোভ্যানটি নানা বাড়ি থেকে আনতে গিয়েছিল। আর নানা বাড়ি গ্রামের এক ছিনতাইকারীর টার্গেটে পরিণিত হয়ে মাত্র ১২ হাজার টাকার মূল্যের একটি পুরাতন অটোভ্যানের কারণে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহর হাতে খুন হয়েছে শিশু ইসমাইল।

তার বাবা এই শিশুটিকে অটোভ্যানটি আনার জন্য পাঠিয়েছিল।শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার তাড়াশ-গুরুদাসপুর আঞ্চলিক সড়কের তাড়াশ অংশের দিঘী সগুনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।কিশোর ইসমাইল নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর গ্রামের আনিছুর রহমানের ছেলে। পরিবার ও পুলিশ জানান, ইসমাইলের বাবা আনিছুর রহমান পাশ্ববর্তী শ্রীপুর দিয়ারপাড়া গ্রামের শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে রাতে সেখানে তার সংসার চালানোর একমাত্র পুঁজি অটোভ্যানটি রেখে হেঁটে বাড়িতে আসেন।

পরে শনিবার তিনি তার ছেলে ইসমাইলকে নানা বাড়ি থেকে ওই অটোভ্যানটি আনার জন্য পাঠান। আর ওই গ্রামেরই আমিরুল ইসলামের ছেলে ছিনতাইকারী মো. আব্দুল্লাহ (২২) টার্গেটের শিকার হয় কিশোর ইসমাইল। এ সময় ছিনতাইকারী মো. আব্দুল্লাহ বেশি টাকা ভাড়া দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাঁকে ফুঁসলিয়ে রাজি করে তাড়াশের দিকে রওনা হোন।পরে পথিমধ্যে আব্দুল্লাহ তাড়াশ-গুরুদাসপুর আঞ্চলিক সড়কের তাড়াশ অংশের দিঘী সগুনা এলাকায় এসে গরমের কথা বলে বিশ্রামের জন্য সড়কের পাশেই একটি নির্জনস্থানে ইসমাইলকে নিয়ে আসে। আর সেখানে তাঁকে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।

পাশাপাশি মরদেহটি সড়কের পাশের বোরো জমিতে ফেলে রেখে অটোভ্যানটি নিয়ে তাড়াশের মাধাইনগর ইউনিয়নের কাস্তা বাজারে যান। সেখানে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহ ওই অটোভ্যানটি বিক্রির জন্য স্থানীয় অটোভ্যান চালকদের সঙ্গে দেন-দরবার করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহ কথা বার্তায় স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। তখন তারা আব্দুল্লাহকে ধরে ফেলে এবং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিলুর রহমান হাবিলের কাছে নিয়ে যান।

সেখানে জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহ অটোভ্যানটি ছিনতাই করার কথা স্বীকার করেন। তখন চেয়ারম্যান হাবিব তাড়াশ থানায় পুলিশকে ফোন দেন। কিছুক্ষণ পর তাড়াশ থানার কয়েকজন পুলিশ এসে আব্দুল্লাহসহ অটোভ্যান থানা নিয়ে আসেন। আর থানা পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহ অটোভ্যানটি ছিনতাই ও এর চালক কিশোর ইসমাইলকে শ্বাসরোধ করে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন।

তখন পুলিশ আব্দুল্লাহকে নিয়ে গিয়ে তাড়াশের দিঘী সগুনা এলাকার একটি বোরো জমির ধানের মধ্যে থেকে কিশোর ইসমাইলের মরদেহটি উদ্ধার করেন। পাশাপাশি মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য শেখ ফজিতুলন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে মর্গে পাঠান।

এ দিকে ইসমাইলের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার বাবা মা ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া ইসমাইলের বাবা আনিছুর রহমান জানান, তিনি ভূমিহীন মানুষ। তার দুটি সন্তান নিয়ে সৎভাবে জীবনযাপন করতে অটোভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন।

অথচ একজন সৎ পরিশ্রমী অটোভ্যান চালকের ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। আমি এর বিচার চাই।তাড়াশ থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম জানান, রবিবার বিকালে নিহত ইসমাইলের বাবা আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ছিনতাইকারী আব্দুল্লাহকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।